পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবন্ধুর-রাজ্যে।
৭১

করিলেন। এই দরবারশালাটি য়ুরোপীর আসবাবে সজ্জিত। কিন্তু মহারাণী স্বয়ং স্বদেশীয় পরিচ্ছদ ধারণ করায় তাঁহাকে মূর্তিমতী ভারতলক্ষ্মী বলিয়া মনে হইতেছিল। তাহার পার্শ্বমুখের অবয়বরেখা সরল, মুখশ্রী অতি বিশুদ্ধ, চোখদুটি বেশ বড় বড়,—তাঁহার সমস্ত শ্রীসৌন্দর্য্য স্ববংশ- সুলভ। মায়ের-জাতির প্রথা-অনুসারে, তিনি তাঁহার কৃষ্ণ কেশকলাপ প্রথমে ফিতাবন্ধনের আকারে বিন্যস্ত করিয়া, পরে সেইগুলি একত্র সম্মিলিত করিয়া ছোট একটি মসৃণ টুপির মত মস্তকে ধারণ করিয়াছেন। উহা সম্মুখদিকে ঝুকিয়া, ললাটের উপর ছায়াপাত করিয়াছে। হীরক- মাণিক্য-খচিত কানবালার ভারে কর্ণদ্বয়ের নিম্নাংশ অতিমাত্র প্রসারিত। মখমলের ‘চোলি’-পরা, নগ্ন বাহুদ্বয়ে বহুমূল্য মণিখচিত বাজুবন্ধ; পবিধানে জরির পাড়ওয়ালা শাড়ী;—তাহাতে সুন্দর নকসা কাটা। প্রস্তর প্রতিমা যেরূপ পরিচ্ছদে আবৃত হয়, তাঁহার পরিচ্ছদ তদনুরূপ। যে দেশে নিম্নশ্রেণীর মধ্যেও বেশভূষায় মার্জিতরুচি পরিলক্ষিত হয়, সেখানে পুরাতন রাজবংশের সম্ভ্রান্ত রমণীদিগের কিরূপ বেশভূষা, তাহা সহজেই কল্পনা করা যাইতে পারে। কিন্তু এই মহারাণীর সৌন্দর্য্য, বেশভূষা অতিক্রম করিয়া, সর্বোপরি তাহার করুণা মুখশ্রীতে, তাঁহার মৌনমাধুর্য্যে, তাঁহার নারীজনোচিত শালীনতায় আরো যেন ফুটিয়া উঠিয়াছে।

 তা ছাড়া, তাঁহার স্মিতহাস্যের অন্তরালে যেন একটা চাপা বিবাদের ভাব প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে, বেশ বুঝা যায়। তাঁহার তাপসীকল্প জীবন, কিসের দুঃখে তমসাচ্ছন্ন, তাহা আমি অবগত আছি। ব্রহ্মা তাঁহার অদৃষ্টে একটিও কন্যারত্ন লেখেন নাই; তাঁহার একটি ভাগিনেয়ীও নাই যাহাকে তিনি দত্তকস্বরূপে গ্রহণ করিতে পারেন। তাই তাঁহার বংশলোপ হইবার উপক্রম হইয়াছে। বহুশতাব্দী হইতে আজ পর্যন্ত যাহা কখন ঘটে নাই, এইবার তাহা ঘটিতে চলিল। এইবার ত্রিবন্ধুরে একটা বিষম বিপ্লব উপস্থিত হইবে।••• .