পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

করে; তাহাদের নৌকাদির জন্য অল্পস্বল্প স্থান এবং বেলাভূমির একটু আধটু কোণ খালি রাখিতেও তাহারা যেন কুষ্ঠিত হয়।

 কিন্তু এখানকার লোকেরা সমুদ্রকে শূন্য শ্মশান ও সাক্ষাৎ মৃত্যু মনে করিয়া, যতটা পারে, তাহা হইতে তফাতে সরিয়া যায়। এদেশে সমুদ্র - একটা দূরতিক্রমণীয় অতলস্পর্শ রসাতলবিশেষ —যাহা কোন কাজে আইসে না, যাহা কেবল মনুষ্যের অন্তরে ভয়ের উদ্রেক করে।সমুদকে দুর্গম স্থান মনে করিয়া কেহ তাহার নিকটে যাইতে সাহস করে না। আমি এই অনন্ত বীচিমালার সম্মুখে, বালুরাশিব অফুরন্ত রেখাব উপবে, একটি পুরাতন প্রস্তরমন্দির ছাড়া মনুষ্যের আর কোন নিদর্শন দেখিতে পাইলাম। মন্দিরটি রূঢ়-ধরণে গঠিত, স্থল ও খর্ব্বকার, থামগুলি লুপ্তমুখশ্রী, কতকটা তরঙ্গশীকরে, কতকটা লবণাক্ত জলে ক্ষয় হইয়া গিয়াছে। যে সমুদ্র-কর্তৃক ত্রিবন্ধুর কারারুদ্ধ, সেই দুরবৃত্ত সমুদ্রকে মন্ত্রবশীভূত ও প্রশমিত করিবার নিমিত্তই যেন এই মন্দিরটি এখানে অধিষ্ঠিত। এই সন্ধ্যাকালে সমুদ্রটি বেশ প্রশান্ত। কিন্তু গ্রীষ্মের আরম্ভ হইতে, এই সমুদ্র কিছুকালের জন্য আবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করিবে।

 মহারাজা-বাহাদুরের উপদেশ-অনুসাবে দেওয়ান আমার জন্য যতপ্রকার অনুষ্ঠান-আয়োজনের কল্পনা করিয়া আমাকে অনুগৃহীত করিয়াছেন, তন্মধ্যে উচ্চবর্ণের বালিকা-মহাবিদ্যালয়ে আমার অভ্যর্থনার্থ যে আয়োজন হইয়াছে, তাহাই আমি বিশেষ অনুগ্রহ বলিয়া মনে করি। উহা আমি কখন ভুলিতে পারিব না।

 সূর্য্যোদয় হইবামাত্র আমি গৃহ হইতে যাত্রা করিলাম। কিন্তু বলিতে কি, আমার মনে মনে একটু আশঙ্কা ছিল;—না জানি, সেখানে গিয়া কি দেখিব। হয় ত এমন-কিছু দেখিব, যাহা শুধু কঠোর গ্রাম্য-গুরুমহাশয়কে স্মরণ করাইয়া দিবে; কিংবা এমন-কিছু দেথিব, যাহা অতীব নীরস, বিরক্তিকর ও ক্লান্তিজনক। পাছে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্ব্বে সেখানে