পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

আমাদের এই নিজস্ব সূর্য্য,—যে সূর্য্য, অনাদিকাল হইতে ঘুরিতে ঘুরিতে, আমাদিগকে তাহার দিকে নিয়ত আকর্ষণ করিতেছে—আর এক মুহূর্ত্ত পরেই অন্য অগণ্য সূর্যের মধ্যে হারাইয়া যাইবে। এই সেই অস্তাচলের অধিত্যকা—সেখানে নৈশ আকাশের স্বচ্ছতার মধ্য দিয়া, আমরাও ঘুরিতে ঘুরিতে সেই মহারাত্রির অভিমুখে—সেই অন্তহীন তমোরাশির অভিমুখে এখনি গমন করিব। এক্ষণে সায়াহ্নের কুহক জালে আচ্ছন্ন হইয়া, এই অস্তমান সূর্যের তাম্র পাটল প্রভা নিরীক্ষণ করা যাক্। পূর্ব্বদিকে, সমুদ্রের ঊর্দ্ধে, দিগন্তের উচ্চদেশে, জনশূন্য উজাড় রক্তবর্ণ প্রস্তরের একটি পর্ব্বতমালা, জ্বলন্ত অঙ্গারের ন্যায় লাল হইয়া উঠিয়াছে। এই পর্ব্বতগুলি—সেনাই, সের্ব্বাল ও হোরেব্। আবার সেই মূসার সময়কার পৌরাণিক কাহিনীর প্রভাব আমাদের মনকে অধিকার করিল—সেই সকল কাহিনী, যাহা বংশপরম্পরাক্রমে, ধর্ম্মভাবের যেন একটা ভূমি প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছে।

 কিন্তু এই জলন্ত শিখরগুলি নির্ব্বাপিত হইতে আর বড় বিলম্ব নাই। সূর্য্য জলরাশির পশ্চাতে ঢলিয়া পড়িল, সায়াহ্নের ক্ষণিক মায়া-দৃশ্য অন্তর্হিত হইল; সন্ধ্যার ধূসরতার মধ্যে, সিনাই, সের্ব্বাল, ও হোরেব, বিলুপ্ত হইল,—বিলীন হইল। আর উহাদিগকে দেখা যায় না;—আসলে উহারা কি? ধরাপৃষ্ঠে কতকগুলি পাথর একস্থানে আটকাইয়া পড়িয়াছে এই মাত্র; কিন্তু বাইবেলের “exodus”-পরিচ্ছেদের কবিত্ব-প্রভাবে, উহাদিগকে আমরা কল্পনায় অত্যন্ত বাড়াইয়া তুলিয়াছি!

 অনন্ত রাত্রি—প্রশান্ত রাত্রি আসিয়া এখনি সকল পদার্থের যথাযথ পরিমাণ নির্দ্দিষ্ট করিয়া দিবে। এখনি, অনন্ত আকাশে, সৌররাজ্যের যাত্রীদল দেখা দিয়াছে। উহাদের মধ্যে কাহারও যদি পদস্খলন হয়, তাহা হইলে সকলেই ঐ অন্ধকারাচ্ছন্ন অগাধ শূন্যের মধ্যে পতিত হইবে, আমরাও পতিতহইব—এই ভাবটা আবার আমার মনে জাগিয়া উঠিল। সূর্য্য