আঁকিয়াছে—উহার পালকরাশি অতীব জটিল; পাখীটা বৃক্ষশাখায় বসিয়া আছে। বেশ বুঝা যাইতেছে, বালিকা মাপ-জোক্ না করিয়াই, মধ্যস্থল হইতে আঁকিতে আরম্ভ করে। সমস্ত মাথাটা কুলায়-কাগজের এরূপ উচ্চতা ছিল না; তাই, ঈগ্লের মাথাটা চ্যাপ্টা করিয়া আঁকিয়াছে—কাগজপ্রান্তের একেবারে গা-ঘেঁষিয়া আঁকিয়াছে; কিন্তু তবুও একটি পালক বাদ দেয় নাই,—একটি খুঁটি-নাটি বাদ দেয় নাই। ছবির নীচে, বেশ সুস্পষ্টরূপে—জোর-কলমে—নিজের নাম স্বাক্ষর করিয়াছে,—“অপ্সরা”।
জরির কাজ-করা মখ্মল্; বাষ্পবৎ স্বচ্ছ অবগুণ্ঠন; হীরা, মাণিক, স্বচ্ছ-পান্না; সরু-সরু ক্ষুদ্র বাহুতে বড়-বড় বালা সূতা দিয়া আবদ্ধ; দুষ্প্রাপ্য পুরাতন পোর্টুগীমুদ্রায় গ্রথিত কণ্ঠহার;—যে সময়ে গোয়ার সমৃদ্ধ অবস্থা,—এই মুদ্রাগুলি সেইসময়কার;—চন্দনকাষ্ঠের সিন্দুকের মধ্যে না জানি কত শতাব্দী ধরিয়া ঘুমাইয়া ছিল!
সর্ব্বশেষে গান, বহু বেহালার সমবেতবাদ্য, তাহার পর নৃত্য। নৃত্য অতীব জটিল ও বিলম্বিত—একটু ধর্ম্মভাবান্বিত; তালে-তালে পা পড়িতেছে, বাহুসঞ্চালনে মণি-মাণিক্য ঝিক্মিক্ করিয়া উঠিতেছে।…
এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বেশ সুন্দর-সুশ্রী; সচরাচর এরূপ দৃশ্য দেখা যায় না। আর উহাদের কি সুন্দর চোখ!—এরূপ চোখ একমাত্র ভারতবর্ষেই দেখা যায়। অহো! রহস্যের এই কুসুমকলিকাগুলি কি-এক অপূর্ব্ব অতীন্দ্রিয় অকলুষ সৌন্দর্য্যের ছবি আমার মনে অঙ্কিত করিয়া দিল!
কাল আমি ত্রিবঙ্কুর ছাড়িয়া যাইব। এখানে যে আদরযত্ন পাইয়াছি, আমি তার যোগ্য নহি। রাজাকে একটি “ক্রুশ” উপহার দিবার যে ভার গ্রহণ করিয়াছিলাম, আমি সেই প্রীতিকর কাজটি সুসম্পন্ন করিয়াছি। মহারাজার একটা নৌকা করিয়া জলাভূমির রাস্তা দিয়া আমি উত্তরদিকে যাত্রা করিব। কোচিনের ক্ষুদ্র রাজ্যে পৌঁছিতে দুই দিন দুই রাত্রি লাগিবে। সেখানে কিছুকাল অবস্থিতি করিব। তাহার পর, কোচিন