পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

ছাড়াইয়া, ৩০।৪০ঘণ্টার পথ অতিক্রম করিয়া, আবার সেই সব প্রদেশে আসিয়া পড়িব, যেখান দিয়া রেলপথ গিয়াছে এবং যেখান দিয়া আমি অনেকবার যাতায়াত করিয়াছি। যে রেলপথ কালিকট্‌ হইতে মাদ্রাজে গিয়াছে, সেই মহারেলপথটি আবার আমি ধরিব।

 ত্রিবন্দ্রমে আজ আমার শেষ রাত্রি। তাই আজ সহরের অলিগলির মধ্যে ইচ্ছা করিয়া একটু বিলম্ব করিতেছি;—সেই সব পথ, যেখানে তমসাচ্ছন্ন নিবিড় পল্লবপুঞ্জের মধ্যে নারিকেলতৈলের রুদ্ধশ্বাস দীপগুলি মহাপ্রভাবশালী তালপুঞ্জের নৈশ অন্ধকার ভেদ করিতে না পারিয়া যেন হতাশ হইয়া পড়িয়াছে। দিনমান অপেক্ষা রাত্রিকালেই উদ্ভিজ্জজীবনের প্রভাব এখানে যেন একটু বেশি করিয়া অনুভব করা যায়;—হরিৎশোভার মহিমাসাগরে যেন ডুবিয়া যাইতে হয়।

 কাল আমি চলিয়া যাইব। এখানে কিছুই আমি দেখিতে পাইলাম। ভারতের হৃদয়দেশে প্রবেশ করিতে পারিলাম না। এই প্রদেশ—যাহা ব্রাহ্মণ্যের কেন্দ্রস্থল বলিলেও হয়—এখানে আসিয়াও আমি ব্রাহ্মণ্যের কিছুই জানিতে পারিলাম না। যথোচিত সাদর অভ্যর্থনা পাইলেও, আমরা য়ুরোপীয়, আমাদের নিকট সে সমস্ত রহস্যের দ্বার এখনো রুদ্ধ।

 বেড়াইতে বেড়াইতে আমি অবশেষে বণিক্‌দের সেই বড় রাস্তায় আসিয়া পড়িলাম। অনাবৃত আকাশ। উপরে তারা ঝিক্‌মিক্‌ করিতেছে। সোজা বড় রাস্তা—প্রাসাদ ও মন্দিরের ঘের পর্য্যন্ত আসিয়া মিলিত হইয়াছে। সরু-সরু উচ্চ দণ্ডের উপর স্থাপিত সেকেলে ধরণের দীপগুলি হইতে যে আলোক বিকীর্ণ—সেই আলোকের মধ্যে, স্ত্রীজনসুলভ দীর্ঘকেশধারী পুরুষজনতা চলাফেরা করিতেছে। এই সব লোক,—খোদিত পিত্তলসামগ্রী, ছাপ্‌-দেওয়া ছিটের কাপড়, পুতুল, দেব-দেবীর মূর্ত্তি—এই সমস্ত দ্রব্যের ক্রেতা-বিক্রেতা। ইহাদের কপিল গাত্র, কৃষ্ণবর্ণ কেশকলাপ, কৃষ্ণবর্ণ জ্বলন্ত চক্ষু। শস্যের দানা, মিষ্টান্ন, উদ্ভিজ্জমূল প্রভৃতি ব্রাহ্মণদিগের