পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৭৯

মিতাহারোপযোগী সামান্য খাদ্যসামগ্রী বিক্রয়ার্থ সজ্জিত রহিয়াছে। অসংখ্য ছোট ছোট দোকান;—উত্তুঙ্গ প্রদীপসমূহের আলোকে আলোকিত। কোন-কোন দীপের তিনটি শিখা। কোন পশুমূর্ত্তি অথবা দেবমূর্ত্তি এই দীপগুলিকে ধারণ করিয়া আছে।

 রাজপথ হইতে দূরে সেই পবিত্র ঘেরের সিংহদ্বার এবং উহা ছাড়াইয়া আরো দূরে মুক্তদ্বার মহামন্দির ও তাহার গভীর অভ্যন্তরপ্রদেশ দেখা যাইতেছে। বিন্দুচিহ্নের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য দীপশিখা সারি-সারি জ্বলিতেছে। ইহা বিষ্ণুর মন্দির;—যেন এই প্রদেশেরই সুগম্ভীর ধ্যানমগ্ন অন্তরাত্মা।

 যতদূর দৃষ্টি যায়—মন্দিরের ভিতরটা সমস্তই আলোকিত। ওখানে পুরোহিত ছাড়া আর কাহারও যাইবার অধিকার নাই। দীপালোকের রেখা দেখিয়া বুঝা যায়—মন্দিরের দালান কতদূর পর্য্যন্ত প্রসারিত। মধ্যস্থলে, গোলাপপাপ্‌ড়ির অনুকরণে একটা জ্যামিতিক নক্সা পরিলক্ষিত হইতেছে—বোধ হয়, উহা একটা প্রকাণ্ড বেলোয়ারির ঝাড়;—কিন্তু এতদূরে যে, ঠিক্ করিয়া কিছুই নিরূপণ করা যায় না। মন্দিরে সারাদিনই পূজার্চ্চনা চলিতেছে। আজ এই সান্ধ্যপূজার সময়, মানবকোলাহলের সহিত মিশ্রিত হইয়া সঙ্গীতধ্বনি—তূরীনিনাদ আমার নিকট পর্য্যন্ত আসিয়া, পৌঁছিতেছে। এই সিংহদ্বার যদিও কখনই রুদ্ধ থাকে না—তবু উহা দুর্লঙ্ঘনীয়। নভোব্যাপ্ত স্বচ্ছ তমোজালের মধ্য হইতে একটি প্রকাণ্ড “পিরামিড্‌” সিংহদ্বারের উপর দেখা যাইতেছে—উহা রাশীকৃত দেবমূর্ত্তির যেন, একটা স্তূপ। উহার খাঁজকাটা চূড়াদেশ—মনে হয় যেন তারকারাজির সহিত সংলগ্ন। চারিটা সিংহদ্বারের উপর এইরূপ চারিটা “পিরামিড’’ অধিষ্ঠিত। প্রতিদিন সান্ধ্যপূজার সময়, প্রত্যেক পিরামিডের উপর, দীপাবলী হইতে প্রসারিত একটা আলোকরেখা পরিলক্ষিত হয়;—এই আলোকরেখা তমসাচ্ছন্ন খোদিত মূর্ত্তিরাশির মধ্য দিয়া লতাইয়া-লতাইয়া চূড়াদেশ পর্য্যন্ত