পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

উঠিয়াছে;—মনে হয় যেন এই সব প্রস্তরময় দেবমূর্ত্তির মধ্য দিয়া একটা স্বর্গের পথ উপরে উঠিয়াছে।

 যে সময়ে রাজপথ জনশূন্য হইয়া পড়ে, সেই সময় এখন উপস্থিত। এই সময়ে আদিম-কালসুলভ কাঠের দোকানগুলিতে দোকানদারেরা বেচাকেনা বন্ধ করিবার উদেবাগ করিতেছে এবং ভূতযোনি যাহাতে গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিতে না পারে, এই উদ্দেশে প্রাচীরের বহির্ভাগে, কুলঙ্গিতে ছোটছোট প্রদীপ জ্বালাইয়াছে।

 দোকানদারের হিসাবনিকাশ করিতেছে। ত্রিবঙ্কুরের গোল-গোল টাকা ও পয়সা উহারা থলিয়া হইতে চাল-ডালের মত মুঠা-মুঠা তুলিয়া একপ্রকার গণনা-যন্ত্রের মধ্যে নিক্ষেপ করিতেছে। কতকগুলা তক্তা—তাহাতে সারি-সারি গর্ত্ত; এই প্রত্যেক কাঠের গর্ত্তের মধ্যে একএকটি মুদ্রা ধরে। যখন তক্তার সমস্ত আধারগর্ত্তগুলি পূর্ণ হইয়া যায়, তখন তাহারা সেই মুদ্রার মোট সংখ্যা ঠিক্‌ জানিতে পারে; তার পর ঐ সব মুদ্রা একটা বাক্সর মধ্যে ঢালিয়া, আবার অন্য মুদ্রার গণনা আরম্ভ করে। অপর কতকগুলি লোক একতাড়া শুষ্ক তালপত্রে তাহার অঙ্কগুলি লিখিয়া হিসাব করিতে থাকে। এই শুষ্ক তালপত্রগুলি কতকটা পুরাকালের “পেপাইরস্‌”-পত্রের ন্যায়। আমার মনে হইল, আমি যেন সেই পুরাকালের মধ্যেই অবস্থিতি করিতেছি।

 রাত্রি অধিক হইয়াছে। জীবন-কোলাহল সহসা স্তম্ভিত হইল। প্রাচীরের ও মন্দিরের প্রদীপগুলি ছাড়া আর সমস্তই অন্ধকারের মধ্যে বিলীন হইল। রমণীরা নিজ নিজ গৃহে প্রবেশ করিয়াছে—কোথাও আর তাহাদিগকে দেখা যায় না। পুরুষের শাদা মসিনা-সূত্র-বস্ত্রে অথবা মল্‌মলে আবৃত হইয়া, কেশকলাপ মুক্ত করিয়া, ছাগাদির সহিত গৃহদ্বারের সম্মুখে বারাণ্ডার নীচে, ছাতের উপর, মৃতবৎ সটান শুইয়া পড়িয়াছে। গৃহকুট্টিমের নীচে অথবা ভূগর্ভস্থ কক্ষে শয়ন করিতে ভারতবাসীর অত্যন্ত