পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৮১

বিতৃষ্ণা। তাই তাহার অবসাদজনক গ্রীষ্মরাত্রে, বিবিধ কুসুমের সুরভি উচ্ছ্বাসে পরিষিক্ত ও নীল ধূলায় পরিলিপ্ত হইয়া বহির্দ্দেশে শয়ন করে।

 প্রভাতে, বায়সদিগের অশুভ কোলাহলের মধ্যে, মন্দিরের প্রাতঃপূজা যখন শেষ হইল, সেই সময়ে একটা গাড়ীতে উঠিয়া আমি যাত্রা করিলাম। প্রথমেই ত্রিবন্দ্রমের বন্দরে উপনীত হইলাম। এই মধুর রমণীয় সূর্য্যোদয়কালে, আর একবার—এবং এই শেষবার—নারিকেলবনাচ্ছন্ন ত্রিবন্দ্রমনগরের মধ্য দিয়া চলিতেছি।

 আজ রাত্রে একটা ঝড় উঠিয়া, রাস্তার রক্তিম ধূলা, ছোট-ছোট মেটে দেয়ালের উপর—সুধালিপ্ত গৃহছাদের উপর ন্যস্ত করিয়াছে; তাহাতে করিয়া, যেন একপ্রকার লাল আলোকে, গৃহগুলি দৃষ্ট হইতেছে। আবার স্থানে-স্থানে, স্তবকে-স্তবকে পুষ্পরাশি তরুসমূহের চূড়াদেশ হইতে ভূতল পর্য্যন্ত ছাইয়া পড়িয়াছে।

 প্রভাতে মহারাজার সিপাই-সান্ত্রি বিভিন্ন স্থানে বদ্‌লি হইয়া দলে-দলে যাতায়াত করিতেছে;—অস্ত্রশস্ত্রে ও উষ্ণীষে তাহাদের দেখিতে খুব জম্‌কাল। একদল লোক শান্তভাবে গির্জ্জার অভিমুখে চলিয়াছে; কেন না, আজ রবিবার। ইহারা ক্ষুদ্র বালিকা, মলমলচাদরে অবগুণ্ঠিতা—হস্তে একএকখানি গ্রন্থ। ইহাদের অধিকাংশই প্রাচীনখৃষ্টানবংশীয়; ইহাদের পূর্ব্বপুরুষ, আমাদের বহুশতাব্দী পূর্ব্বে, খৃষ্টভক্ত। এই সিরীয় অথবা ক্যাথলিক্‌ খৃষ্টানদের গির্জ্জা হইতে ঘণ্টাধ্বনি শুনা যাইতেছে। এই গির্জ্জাগুলি হিন্দুমন্দিরের সন্নিকটে এবং সেই একই হরিৎশোভার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। দেখিলে মনে হয়, শান্তি, সুশৃঙ্খলা, নির্ব্বিঘ্নতা ও পরধর্ম্মসহিষ্ণুতা এখানে পূর্ণভাবে বিরাজমান।

 নৌকারোহণের ঘাট;—ইহাই ত্রিবন্দ্রমের বন্দর। কিন্তু বন্দর বলিলে যাহা বুঝায়—এ সেরূপ বন্দর নহে;—অর্থাৎ সমুদ্রের বন্দর নহে। কেন