পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

না, এখান হইতে সমুদ্র অনধিগম্য। এই বন্দরটি বিস্তৃত বিলের ধারে অধিষ্ঠিত। শতশত অচল-স্থির নৌকার মধ্যে একখানি নৌকা আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছিল। এটি রাজার নৌকা। ইহা দেখিতে কতকটা সেকেলে সুদীর্ঘ রণতরীর ন্যায়; ইহার চোদ্দটা দাঁড়; পশ্চাদ্ভাগে একটি কাম্‌রা;—এই কাম্‌রার মধ্যে পা-ছড়াইয়া ঘুমানো যায়। চৌদ্দজন দাঁড়ী চোদ্দটা সরু বাঁশের দাঁড় যন্ত্রের ন্যায় একসঙ্গে ফেলিতেছে। এই যন্ত্র—তাম্রাভ মানবদেহ;—সুনম্যতা ও বল যেন মূর্ত্তিমান্‌।

 নিবিড় তালবনের মধ্যে, সূর্য্যালোকে, এই বিলটি আমাদের সম্মুখে উদ্ঘাটিত হইল। এই গভীর বিলটি বরাবর সোজা চলিয়াছে। যাত্রারম্ভের সময়, দাঁড়ীরা গান গাইয়া, চীৎকার করিয়া, আপনাদিগকে উত্তেজিত করিয়া তুলিল। কীটাণুসঙ্কুল এই আবিল জলরাশি আমরা ভেদ করিয়া চলিলাম। ত্রিদিবসব্যাপী নিঃশব্দ জলযাত্রার আজ এই প্রথম আরম্ভ।

 বিলের দুইধারে তালতরুপুঞ্জ অফুরন্ত পর্দ্দার ন্যায় একটার পর একটা ক্রমাগত আসিতেছে। মধ্যে মধ্যে বহুকাণ্ডবিশিষ্ট বটবৃক্ষ। শাখায়-শাখায় অপরিচিত কুসুমগুচ্ছ মাল্যাকারে বিলম্বিত; এবং বিন্দুলাঞ্ছিত আলুলিতদল একপ্রকার পদ্ম, “কাঠিতে-জড়ানো সূতার গুটির ন্যায় খাগড়াবনের মধ্যে গজাইয়া উঠিয়াছে।

 ত্রিবন্দ্রম-অভিমুখে নৌকাসকল প্রতিমূহূর্ত্তে আমাদের নৌকার সম্মুখ দিয়া যাইতেছে। এই শান্তিময় নিস্তব্ধপ্রদেশের এই বিস্তীর্ণ জলাশয়টি লোকযাতায়াতের মহামার্গ। এই নৌকাগুলি প্রকাণ্ড, আকারে “গণ্ডোলা”র ন্যায়,—অতীব মন্থর ও নিঃশব্দচারী। সুনম্য-সুন্দর-অঙ্গভঙ্গি-সহকারে মাল্লারা লগি মারিয়া নৌকা চালাইতেছে। এই নৌকাগুলিরও পশ্চাদ্ভাগে একএকটি কাম্‌রা,—এই কাম্‌রাগুলি ভারতবাসী স্ত্রী-পুরুষে পরিপূর্ণ। আমরা চৌদ্দদাঁড়ের নৌকা করিয়া ব্যস্তভাবে কোথায়-না-জানি চলিয়াছি,—