পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

এইভাবে ১৮ক্রোশ পথ উহারা অতিক্রম করিয়াছে। কেবল, অল্পস্বল্প স্বেদবিন্দু মুক্তাফলের ন্যায় উহাদের গাত্রে দেখা দিয়াছে; তাহাতে, উহাদের দেহযষ্টি খাঁটি ধাতবপদার্থের ন্যায় ঝিক্‌মিক্‌ করিতেছে। প্রখরভীষণ সূর্য্যকিরণে উহাদের দেহপঞ্জরের রেখাবলি আরো যেন পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে। তটজাত ঝোপের অবসাদক্লিষ্ট শুভ্র কুসুমসমূহ বৃন্তচ্যুত হইয়া, উপর হইতে নীল জলরাশির উপর পতিত হইতেছে। উহাদের অতিপ্রচুর অনাবশ্যক ফলরাশিও বিকীর্ণ হইয়া, ছোট ছোট সোনার “আপেলের’’ ন্যায় চারিদিকে জলের উপর ভাসিতেছে।

 আমাদের মাঝিমাল্লারা অবিশ্রান্ত বাহিয়া চলিয়াছে। এইবার উহারা গান ধরিয়াছে। স্বাস্থ্যকর-শ্রমপ্রভাবে তন্দ্রাভিভূত স্বপ্নদর্শী ব্যক্তির ন্যায় উহারা অলস-অবশভাবে গান গাহিতেছে। একপ্রকার ভাবশূন্য স্মিতহাস্যে উহাদের দশনদীপ্তি প্রকটিত হইতেছে।

 এইবার একটি অধ্যুষিত প্রদেশ দিয়া আমরা চলিয়াছি। কতকগুলি গ্রাম; কতকগুলি মন্দির; কতকগুলি হিন্দুধরণে নির্ম্মিত প্রাচীন গির্জ্জা; সিরীয় খৃষ্টানেরা এদেশে আসিয়া, এইরূপ গঠনপ্রণালী স্বেচ্ছাপূর্বক অবলম্বন করিয়াছে।

 সন্ধ্যার মুখে, আবার বিলটি—দুইধারের পর্ণতরুভূষিত উচ্চ পাড়ের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া পড়িল।

 হঠাৎ অন্ধকার;—অন্তর্ভৌম শৈত্য। আমরা একটা সুরঙ্গের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছি। যাহাতে দূরস্থ অন্যান্য বিলের সহিত—উত্তরস্থ বিলসমূহের যোগাযোগ ঘটে, এই উদ্দেশ্যে মহারাজা এই সুরঙ্গটি কাটাইয়াছেন। আজ সন্ধ্যায় এবং কাল সমস্তদিন আমরা এই অন্তর্ভৌম খালের মধ্য দিয়া যাইব। দাঁড়পতনের শব্দ এখন যেন দশগুণ বর্দ্ধিত হইল। অন্ধকারের ন্যায় কালো-কালো চলন্ত নৌকাগুলা যখন আমাদের নৌকার সম্মুখে আসিয়া পড়ে, তখন আমাদের মাল্লার চীৎকার করিয়া উঠে;—