পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৫
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৮৫

সেই শোকগম্ভীর প্রতিধ্বনির অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত পুনরাবৃত্তি হইতে থাকে।

 এখন মধ্যাহ্ন। এইবার মাঝিমাল্লারা বদ্‌লি হইবে। অন্তর্ভৌম খাল অতিক্রম করিয়া আবার আমরা তালীবনসঙ্কুল ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জের গোলকধাঁধার মধ্যে আসিয়া পড়িলাম। সুশ্যামল-তরুপল্লব-নিমজ্জিত একটি গ্রামের সম্মুখস্থ তটভূমিতে আসিয়া আমাদের নৌকা ভিড়িল! এইখানে চাল্লিশজন নূতন মাল্লা আমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছিল। মহারাজার নৌকার জন্য, সমস্ত পথ এইরূপ লোকবদ্‌লির বন্দোবস্ত আছে।

 এই নূতন মাল্লারা স্ব স্ব স্থানে উপবিষ্ট হইলে পর, একপ্রকার উন্মত্ত অঙ্গচালনা ও কোলাহল আরম্ভ হইল। শিশুসূলভ আনন্দের উচ্ছ্বাসে উচ্ছসিত হইয়া উহারা যাত্রা আরম্ভ করিল, খুব উত্তেজিত হইয়া দাঁড় ফেলিতে লাগিল, এবং শুভ্র দন্তপংক্তি আ-প্রান্ত বিকশিত করিয়া হাসিতে লাগিল—গাহিতে লাগিল। উহাদের মধ্যে কেহ কেহ খৃষ্টান;—খৃষ্টসন্ন্যাসীরা যে বক্ষ-আবরণ পরিধান করে, সেই “স্ক্যাপুলারি” ইহাদের নগ্নবক্ষে ঝুলিতেছে। অপর মাল্লাদের ললাটে শৈবচিহ্ন, এবং বাহু ও বক্ষদেশে ভস্মধূসর তিনটি করিয়া সমতল রেখা অঙ্কিত।

 আবার সেই তালজাতীয় তরুপুঞ্জ,—সেই একঘেয়ে তালীবনেরপ্রাচুর্য্যমহিমা!...উহা দেখিয়া-দেখিয়া চিত্ত উদ্বেজিত ও ক্লান্ত হইয়া পড়ে। মনে করিয়া দেখ,—তিনশতক্রোশব্যাপী সমস্ত প্রদেশটি উহাদের নিবিড় শাখাপুঞ্জে সমাচ্ছন্ন। ইহাতে, মনের মধ্যে কেমন একপ্রকার যাতনা উপস্থিত হয়। পুরাকালের লোকেরা যাহাকে “অরণ্যভীতি” বলিত—ইহা তাহারি একটা বিশেষ-আকার বলিলেও হয়।

 সেই তালজাতীয় তরু; ক্রমাগত সেই তালজাতীয় তরু—তাহার আর অন্ত নাই। তন্মধ্যে কতকগুলি গগনস্পর্শী তালতরুর শাখাপত্র একত্র পুঞ্জীভূত। তাহাদের উত্তুঙ্গ কাণ্ডের চূড়াদেশ হইতে যেন কতকগুলা,