পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

পালোকের থোপ্‌না নীচে ঝুলিয়া পড়িয়াছে। আবার কতকগুলি তরুণ তরু আর্দ্রতপ্ত ভূমি হইতে গজাইয়া উঠিয়াছে; তাহাদের শাখাপত্র আরো বিশাল। সমস্তই কি হরিৎ-শ্যামল!—কি অভিনব উজ্জ্বলকান্তি! সূর্য্যকিরণে ঐ সকল স্নিগ্ধমসৃণ পত্রপুঞ্জ ঝিক্‌মিক্‌ করিয়া জ্বলিতেছে; এবং উহাদের তলদেশে, এই মধ্যাহ্নসময়ে, বিলের জলরাশি টিনের দর্পণের ন্যায় ঝক্‌মক্‌ করিতেছে।

 সূর্য্য এখন মাথার উপর। শ্বেতাঙ্গ লোকদিগের যাহাতে সদ্য মৃত্যু হইবার কথা—সেই মধ্যাহ্নসূর্য্যের প্রখর কিরণে, আমার এই নৌকার মধ্যে, কি অপর্য্যাপ্ত জীবনী শক্তি ব্যয়িত হইতেছে! দাঁড়ীরা, বাহুপেশী প্রসারিত ও আকুঞ্চিত করিয়া দুইঘণ্টাকাল সমানভাবে দাঁড় টানিতেছে। বাহুর শিরাগুলা ফুলিয়া খাড়া হইয়া উঠিতেছে; আর সেই সঙ্গে উহার গলা ছাড়িয়া তীক্ষ্ণস্বরে গান গাহিতেছে। এক-একসময়ে, যেন একটা মত্ততার আবেশ আসিয়া উহাদের চিত্তকে অধিকার করে;—তখন, উহারা হাঁপাইতে-হাঁপাইতে ঝোঁকে-ঝোঁকে গান গায়িতে থাকে, জলরাশিকে অতীব ভীষণভাবে আক্রমণ করে;—জল ফেনাইয়া উঠে; দাঁড়গুলা ভাঙ্গিবার উপক্রম হয়। তখন কৃষ্ণচর্ম্মের উপর অঙ্কিত শৈবচিহ্নগুলি স্যন্দমান স্বেদজলে মুছিয়া যায়।

 সন্ধ্যার মুখে, বিলটি আবার দুইধারের গালিচা-বৎ তৃণভূষিত উচ্চপাড়ের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া পড়িল। আমাদের চতুর্দ্দিকে শত শত নৌকা বিশ্রাম করিতেছে এবং আমাদের মাথার উপর, খোদাই-কাজ-করা একটা প্রস্তরসেতু প্রসারিত। যে স্থানে আমরা আসিয়াছি, ইহা “কিলোন্”-নামক ত্রিবঙ্কুরের একটি বৃহৎ নগর;—ত্রিবন্দ্রমের ন্যায়, বাগান-বাগিচার মধ্যস্থিত একটা মুক্ত পরিসরভূমি। এখানে তালজাতীয় বৃক্ষ আর দেখা যায় না। অন্য বৃক্ষ তাহাদের স্থান অধিকার করিয়াছে। এই বৃক্ষগুলি আমাদের বৃক্ষ হইতে ভিন্ন। এমন কি, এখানে শাদ্বলভূমি ও গোলাপগুল্মও দৃষ্ট হইতেছে।