পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

সেপ্টেম্বর মাসের জ্বালাময়ী সন্ধ্যার এইরূপ রক্তিম আলোকে, “গ্রীষ্মপ্রধানদেশের’’ প্রথম স্বপ্ন আমার মনে সমুদিত হয়।

 সেই সেকালের গ্রীষ্মবায়ুর মধ্যে, এই একই যুথির সৌরভ বিচরণ করিত; এমন কি, তাম্রাভ আকাশের নীচে, উত্তাপ ও সন্ধ্যালোকপ্রভাবে ধূসরীকৃত—এইরূপ কৃষ্ণবর্ণ বাদুড় ও পেচকগুলা সেখানেও যাতায়াত করিত।…তবে কিনা, এখানে যে বাদুড়গুলা গৃহের মধ্যে বিচরণ করে, তাহা আমাদের চামচিকার অপেক্ষা অনেক বড়; আমাদের চাম্‌চিকার ন্যায়, ইহারাও নিঃশব্দচারী ও বিচিত্রগতি; কিন্তু ইহারা সেই বৃহৎ-আকারের বাদুড়, যাহাকে “ভ্যাম্পায়ার” বলে; এবং ইহাদের ডানা এত বিস্তৃত যে, উহারা সম্মুখে আসিলে পথ হইতে সরিয়া দাঁড়াইতে হয়!…তাহার পর সুদূরে—এই উদ্যানের চারিদিকে তমোবেষ্টনের ন্যায় যে তরুপুঞ্জ রহিয়াছে, তাহারি মধ্য হইতে সহসা তূরীনিনাদ ও পবিত্র শঙ্খধ্বনি সমুত্থিত হইল। এখন পূজার সময়;—তাই মানবকোলাহলও শুনিতে পাইলাম;—মন্দিরের অভ্যন্তর হইতে লোকেরা দেবতার নিকট যে স্তবস্তুতি করিতেছে—ইহা তাহারই শব্দ।...

 তাহার পর, নিস্তব্ধতা আবার যেন ঘনাইয়া আসিল;—মুহূর্ত্তের মধ্যে যেন একটা বিশেষ আকার ধরিয়া পুনরাবির্ভূত হইল। কি-যেন একটা অননুভূতপূর্ব্ব বিষাদের ভারে আমি অভিভূত হইয়া পড়িলাম। স্মরণ হইল, আজ ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দ, ৩১শে ডিসেম্বরের রাত্রি। আমার শৈশবের শতাব্দীটি কালের অতল রসাতলে এখনি নিমগ্ন হইবে।...আমাদের নিকটে যাহা অনন্তবৎ—সেই তারকারাজি নভস্তলে ফুটিয়া উঠিয়াছে। গুরুভার অনন্তের ভাব আসিয়া, আমার ন্যায় ক্ষণজীবি প্রাণীর চিত্তকে বিদলিত করিল। এই পুরাতন শতাব্দী—যাহা অস্তোন্মুখ, এবং এই উদীয়মান নব শতাব্দী—যাহাতে আবার আমি ভাসিয়া চলিব—এই উভয়েরই উত্থানপতন মহাভীষণ অনন্তের তুলনায় অতীব নগণ্য বলিয়া