পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৮৯

মনে হয়। সকল পদার্থই শীঘ্র চলিয়া যাইতেছে−মরিয়া যাইতেছে—এইরূপ, একটা ভাব আসিয়া মনোমধ্যে উৎকট যন্ত্রণা উপস্থিত হইল। বৃহৎ বন ও বৃহৎ মন্দিরসমূহে আমি পরিবেষ্টিত−সঙ্কীর্ণ ব্রাহ্মণভারতের মধ্যে—ছায়ান্ধকারের মধ্যে আমি আবদ্ধ—এই কথা মনে হওয়ায়, মনোমধ্যে একপ্রকার অভূতপূর্ব্ব ও সুমধুর উদ্বেগ উপস্থিত হইল। এই সব গোলাপযুথিকাশোভিত উদ্যান দর্শনে বারংবার স্বদেশবিভ্রম হইলেও, প্রবাসের ভাব মন হইতে একেবারে দূর হয় না। যখনি যে দেশে গিয়াছি—এইরূপ অসম্বদ্ধ ও অনির্ব্বচনীয় ভাবসমূহ আমার চিত্তমধ্যে উদয় হইয়াছে। তবে কিনা, সকল জিনিষেরই মত, তাহার তীব্রতা কালসহকারে হ্রাস হইয়া আসে। কিন্তু আজ রাত্রে, আমার এই দৈহিক শ্রান্তির মধ্যে, অবসাদময় উষ্ণতার মধ্যে, তন্দ্রাবস্থার মধ্যে, ঐ সমস্ত ভাব আবার যেন সহসা ঘনাইয়া আসিল।...

 রাত্রি নয় ঘটিকার সময়, এই সুন্দর পরিষ্কার তারার আলোকে, আবার আমরা যাত্রা করিব। আমার মাঝিমাল্লারা বিশ্রাম করিয়াছে। এখন আরো তিনক্রোশ তাহাদিগকে নৌকা বাহিতে হইবে। তাহার পর, আমরা একটা গ্রামে গিয়া পৌঁছিব—সেইখানে মাঝিমাল্লা বদ্‌লি হইবে।

 আমাদের যাত্রাকালে, মন্থরগামী নৌকাসকল, আবার আমাদের নৌকার পাশ দিয়া যাইতে লাগিল;−কালো-কালো ছায়াচিত্র;−জলে প্রতিবিম্ব পড়ায় আরো বড় দেখাইতেছে—যেন অতি-উচ্চ “গণ্ডোলা”—কিন্তু উপচ্ছায়ার মত ঝাপ্‌সা।

 একটু পরেই, গোলকধাঁধার মত এই বিলগুলি সমুদ্রের ন্যায় বিশাল হইয়া উঠিল—অগ্নিশিখায় পূর্ণ হইল। এই অগ্নিশিখাগুলি ধীবরদিগের লণ্ঠান;−মৎস্যদিগকে ডাকিয়া আনিবার জন্য বড়-বড় মশাল; সুদীর্ঘ খাগ্‌ড়ার গুচ্ছে আগুন জ্বালাইয়াছে, এবং যাহাতে না নিবিয়া যায়, এইজন্য উহা ক্রমাগত দুলাইতেছে। এই সকল মশালের আলোকচ্ছটা, দীর্ঘ-