পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

রেখায় জলের উপরে প্রতিবিম্বিত হইতেছে।...নিশার মৃদুমন্দ নিশ্বাসে, লঘুলহরীর ক্ষীণ রেখা জলের উপর কদাচিৎ অঙ্কিত হইতেছে। এই একঘেয়ে দাঁড়পতনের শব্দে সহজেই নিদ্রাকর্ষণ হয়; কিন্তু মনের মধ্যে এই ভাবটি সর্ব্বদাই জাগরূক থাকে যে,−আমার চতুর্দ্দিকে, সর্ব্বত্রই জীবন উদ্যম—সুতীব্র জীবন-উদ্যম স্ফূর্ত্তি পাইতেছে। তবে এ কথা সত্য,−এ জীবনস্ফূর্ত্তি নিতান্ত আদিমকালসুলভ;—আমাদের হ্রদবাসী পূর্ব্বপুরুষের জীবন হইতে অধিক ভিন্ন নহে।

 দাড়ীরা সমস্ত রাত্রি অবিরাম তালে-তালে দাঁড় ফেলিয়াছে। এই কবোষ্ণ রাত্রির অবসানে, নব শতাব্দীর নবরক্তিম প্রথম সূর্য্য একপ্রকার মৎসজীবি-জগতের উপর সমুদিত হইল;—যে জগতের লোক শিকারে রত,—যাহারা এই অকলুষ তরুণ আলোকে আহার্য্য-আহরণের প্রত্যাশায় চারিধারে বসিয়া আছে। বিশাল-বিস্তীর্ণ বিল; দুই ধারের তালজাতীয় নিবিড় তরুপুঞ্জ তটের উপর ঝুঁকিয়া রহিয়াছে; অসংখ্য জেলে-নৌকা;−অনেক সময়ে আমাদের নৌকার গা ঘেঁষিয়া যাইতেছে—আমাদের পথরোধ করিতেছে। কোন নৌকা একস্থানে স্থির হইয়া আছে, আবার কোন নৌকা, যতদূর সম্ভব—নিঃশব্দে মণ্ডলাকারে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। লোকগুলা,—জাল, ছিপ, বল্লম হস্তে লইয়া, ভাসন্ত তক্তার উপর, সজাগসতর্কভাবে দাঁড়াইয়া আছে; জলের মধ্যে কোথাও কিছু নড়িলেই ব্যগ্রভাবে নিরীক্ষণ করিতেছে। পানিভেলা, বক এবং অন্যান্য ছোট ছোট পাখীরাও জলের ধারে কাদার উপর বসিয়া অন্বেষণের তীক্ষ্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছে; এবং অনেক বষির কাঁটায়, প্রসারিত মৎস্যজালে, ত্রিমুখ শূল-অস্ত্রে, শত শত মৎস্যের মুখ আট্‌কাইয়া রহিয়াছে। এই বিলটি—এই সব শীতলমাংস নিঃশব্দচারী ক্ষুদ্রজীবের অফুরন্ত জলাধার। তাই, এত অসংখ্য মৎস্যভোজী এইখানে আকৃষ্ট হয় এবং মৎস্য আহার করিয়া প্রাণধারণ করে। নবোদিত শতাব্দী এ সমস্ত কিছুই পরিবর্ত্তন