পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন।
৯৩

নগর। এইখানে রাজা বাস করেন। বিলের বরাবর ধারে-ধারে, প্যাগোদা-মন্দিরের ন্যায় চারিটা সীরীয় খৃষ্টসম্প্রদায়ের গির্জ্জা, একটা বৃহৎ দেবমন্দির, কতিপয় সৈন্যনিবাস, কতকগুলি পাঠশালা;—এই সমস্ত, লালমাটীর উপর অধিষ্ঠিত ও রক্তিমবর্ণ। একটি মনুষ্য নাই। কিনারায় একখানি নৌকা নাই। এই সমস্ত প্রাণহীন নিষ্প্রভ ঐশ্বর্য্য-আড়ম্বরের পশ্চাতে বিষয়বিতৃষ্ণ ব্রাহ্মণদিগের আবাসগৃহগুলি অরণ্যের বিষাদ-অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইয়া,—সর্ব্বগ্রাসী তালজাতীয় তরুপুঞ্জের মধ্যে, ঝোপ্‌ঝাড়ের মধ্যে, নীলিম ছায়ার মধ্যে—ক্রমশ বিলীন হইয়া গিয়াছে।

 আরো দূরে, জলাশয়ের অপর পারে, বাম কূলে,—জীবন-উদ্যমের উদ্দাম স্ফূর্ত্তি। প্রথমেই হিন্দু বণিক্‌দিগের নগর—“মাতাঞ্চেরি”—শত-শত ক্ষুদ্র গৃহ উদ্ভিজ্জশ্যামল ভূমির উপর অধিষ্ঠিত। একটি উপসাগর-সূত্রে, মহাসমুদ্রের সহিত এই নগরীর যোগাযোগ রক্ষিত হইয়াছে। এই উপসাগরে অসংখ্য নৌকা নোঙর করিয়া আছ; এগুলি সেকেলে-ধরণের নৌকা;—পাল ও অদ্ভুত মাস্তুল বিশিষ্ট। এই নৌকাগুলি আরবসমুদ্রের উপর দিয়া ক্রমাগত যাতায়াত করে, মস্কটের সহিত বাণিজ্য করে, পারস্য-উপসাগরের অভ্যন্তর পর্য্যন্ত প্রবেশ করে এবং বসোরা-নগরে মসলা-সামগ্রী ও শস্যাদি লইয়া যায়। তার পর, আরো দূরে—পোর্টূগী ও ওলন্দাজদিগের পুরাতন কোচিন। এখন ইহা অন্য প্রভুদের হস্তে। উহাদের একটা বন্দর আছে,—সেইখানে আধুনিক জাহাজগুলার ধোঁয়া-চোং হইতে কৃষ্ণবর্ণ ধূমরাশি নিরন্তর উচ্ছ্বসিত হইতেছে।

 এই বিলের মাঝখানে,—ঐ পরস্পর-বিসদৃশ তিনটি নগরের সংস্রব হইতে দূরে,—একটি তরুসমাচ্ছন্ন দ্বীপ আছে; এখন সেই দ্বীপের অভিমুখে আমার নৌকা চলিতে লাগিল। হরিৎ-শ্যামল উদ্ভিজ্জরাশির মধ্যে নিমজ্জিত কতকগুলা শাদা-শাদা সোপানপংক্তি, একটা শাদা ঘাট, একটি শাদা রঙের পুরাতন প্রাসাদ। আমি যে রাজার অতিথি, সেই রাজার আদেশক্রমে