পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন।
৯৫

শান্তি করিতেছেন। কোচিন-রাজ্যের অল্পবয়স্ক যুবরাজ—নিতান্ত শিশু—সম্প্রতি স্বকীয় কৃষ্ণবর্ণ কুসুমনেত্র চিরতরে নিমীলিত করিয়াছেন; তাই, প্রাসাদের সমস্ত লোক এখন শোকমগ্ন।

 এই রাজকীয় বিজনতার মধ্যে না আসিয়া, মাতাঞ্চেরি-নগরে অবস্থিতি করিলে আমার পক্ষে ভাল হইত। সেখানে একটা ক্ষুদ্র পান্থনিবাসে থাকিলেও, আজ আমি সায়াহ্নে, তত্রত্য জনতার মধ্যে মিশিয়া, তাহাদের প্রকৃত জীবন প্রত্যক্ষ করিতে পারিতাম!…এখানে ও ত্রিবঙ্কুরে—আমি ভারতবর্ষে থাকিয়াও যেন নাই। বিশিষ্টদর্শন নিঃশব্দচারী ভূত্যেরা, মার্জ্জারবৎ-পদসঞ্চারে, খাঁজ-কাটা-খিলান-বিলম্বিত সমস্ত দীপগুলি জ্বালিয়া দিল। নূতন-ধরণে পুষ্পপল্লবে সুসজ্জিত টেবিলের ধারে বসিয়া আমার “কয়েদির ভোজ” শেষ হইলে পর,—নবশতাব্দীর প্রথম সন্ধ্যার অভ্যুদয় দেখিবার জন্য আমি উদ্যানের মধ্যে প্রবেশ করিলাম। যেখানে নির্ব্বাপিতপ্রায় জ্বলন্ত অঙ্গারের রং এখনো পর্য্যন্ত রহিয়াছে—সেই পশ্চিম দিগন্তপটের উপর, এই দ্বীপতরুগুলি, ঘোর-কৃষ্ণবর্ণ কত-কি দুর্ব্বোধ্য চিত্রাক্ষর অঙ্কিত করিতেছে। এখনো, উদ্যানবীথির ঊর্দ্ধদেশে—উত্তপ্ত নভস্তলে, সেই সন্ধ্যাচর জীব—পেচক ও বৃহৎ-জাতীয় বাদুড় বিচিত্র চক্রগতিতে উড়িয়া বেড়াইতেছে।

 তাহার পর, সমস্ত আকাশে, মিট্‌মিট্‌ করিয়া তারা জ্বলিতে লাগিল—সহসা রাত্রি আসিয়া পড়িল।

 প্রভাতে রক্তিমভানু আবার যখন উদিত হইল, দেখিলাম—বৃহৎ সোপানের তলদেশে আমার নৌকা প্রস্তুত রহিয়াছে। নৌকায় উঠিয়া, বিলের মধ্য দিয়া, মাতাঞ্চেরি-নগরের অভিমুখে চলিলাম। অবশেষে সহরের ইহুদিবিভাগে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। অষ্টম শতাব্দীতে, জেরুশালেমের দ্বিতীয় মন্দিরটি যখন ধ্বংস হইয়া যায়, সেই সময়ে প্রায় দশসহস্র ইহুদি ও ইহুদিনী এই ম্যালাবার-প্রদেশে আসিয়া, ক্র্যাঙ্গানোরে