সে এগিয়ে যেতেই করিম লাঠিয়ালের লাঠি এসে পড়লো ওর মাথায়। রামু সর্দার লাঠি ঠেকিয়ে দিতেই করিম হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলো—সামলাও!
আবার ভীষণ বাড়ি।
রামু সর্দার ফিরিয়ে বাড়ি দিলে।
—সাবাস? সামলাও।
রামু সর্দার ফাঁক খুঁজছিল। বিজয়গর্বে অসতর্ক করিম লাঠিয়ালের মাথার দিকে খালি ছিল, বিদ্যুৎ বেগে রামু সর্দার লাঠি উঠিয়ে বললে—তুমি সামলাও কর্মে খানসামা।
সঙ্গে সঙ্গে রামুর লাঠি ঘুরে গেল বো ঁকরে ওর বাঁকা আড়-করা লাঠির ওপর দিয়ে, বেল ফাটার মত শব্দ হোল। করিম পেঁপে গাছের ভাঙা ভালের যত পড়ে গেল বাঁধালের জালের খুঁটির পাশে। কিন্তু রামু সামলাতে পারলে না। সেও গেল হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অমনি করিম লাঠিয়ালের সঙ্গী লাঠিয়ালরা দুড়দাড় করে লাঠি চালালে ওর উপর যতক্ষণ রামু শেষ না হয়ে গেল। রক্তে বাঁধালের ঘাস রাঙা হয়ে ছিল তার পরদিন সকালেও। চাপ চাপ রক্ত পড়ে ছিল ঘাসের ওপর —পথযাত্রীরা দেখেছিল। বাঁধালের চিহ্নও ছিল না আর সেখানে। বাঁশ ভেঙেচুরে নিয়ে চলে গিয়েছিল লাঠিয়ালের দল।
এই বাঁধালের খুব কাছে রামকানাই চক্রবর্তী কবিরাজ একা বাস করতেন একটা খেজুর গাছের তলায় মাঠের মধ্যে। রামকানাই অতি গরীব ব্রাহ্মণ। ভাত আর সোঁদালি ফুল ভাজা, এই তাঁঁর সারা গ্রীষ্মকালের আহার—যতদিন সোঁদালি ফুল ফোটে বাঁওড়ের ধারের মাঠে। কবিরাজি জানতেন ভালোই, কিন্তু এ পল্লীগ্রামে কেউ পয়সা দিত না। খাওয়ার জন্য দান দিত রোগীরা। তাও শ্রাবণ মাসে অসুখ সারলো তো আশ্বিন মাসের প্রথমে নতুন আউস উঠলে চাষীর বাড়ি বাড়ি এ গাঁয়ে ও-গাঁয়ে ঘুরে সে ধান নিজেই সংগ্রহ করতে হোত তাঁকে।
রামকানাই খেজুরতলায় নিজের ঘরটিতে বসে দাশু রায়ের পাঁচালি পড়ছিলেন, এমন সময় হৈ-চৈ শুনে তিনি বই বন্ধ করে বাইরে এসে দাঁড়ালেন।