পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তারপর আরও এগিয়ে দেখতে পেলেন, নীলকুঠির কয়েকজন লাঠিয়াল বাঁধালের বাঁশ খুলচে। একটু পরে শুনতে পেলেন কারা বলচে খুন হয়েচে। রামকানাই ফিরে আসচেন নিজের ঘরে, তার পাশ দিয়ে হারু নিকিরি আর মনসুর নিকিরি দৌড়ে পালিয়ে চলে গেল।

 রামকানাই বললেন—ও হারু, ও মনসুর, কি হয়েচে? কি হয়েচে?

 তাদের পেছনে অন্ধকারে পালাচ্ছিল হজরৎ নিকিরি। সে বললে—কে? কবিরাজ মশায়? ওদিকি যাবেন না। রামু বাগ্‌দিকে নীলকুঠির লেঠেলরা মেরে ফেলে দিয়ে বাঁধাল লুঠ করচে।

 রামকানাই ভয়ে এসে ঘরের দোর বন্ধ করে দিলেন।

 একটা খুব আশ্চর্য ব্যাপার ঘটলো এই উপলক্ষে। খুনের চেয়েও বড়, হাঙ্গামার চেয়েও বড়।


 পরদিন সকালে চারিদিকে হৈ-চৈ বেধে গেল—নীলকুঠির লোকেরা পাঁচপোতার বাঁধাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েচে, রামু সর্দারকে খুন করেচে। দলে দলে লোক দেখতে গেল ব্যাপারটা কি। অনেকে বললে—নীলকুঠির সাহেব এবার জলকর দখল করবে বলে এ রকম করচে।

 অনেকে রাজারামের বাড়ি গেল। দেওয়ান রাজারাম আশ্চর্য হয়ে বললেন— —খুন? সে কি কথা? আমাদের কুঠির কোন লোক নয়। বাইরের লোক হবে। রামু বাগ্‌দি ছিল বদমাইশের নাজির। তার আবার শত্রুর অভাব! তুমিও যেমন। যা কিছু হবে, অমনি নীলকুঠির ঘাড়ে চাপালেই হোল! কে খুন করে গেল, নীলকুঠির লোকে করেচে—নাও ঠ্যালা!

 বড়সাহেব রাজারামকে ডেকে বললে—খুনের কঠা কি শুনিটেছি? কে খুন করিল?

 রাজারাম বললেন—আমাদের লোক নয় হুজুর। তার শত্রু ছিল অনেক —রামু বাগ্‌দির। কে খুন করেচে আমরা কি জানি?

 —আমাদের লাঠিয়াল গিয়াছিল কি না?

৯৯