তাকে আবদ্ধ থাকতে হবে ততক্ষণ, যতক্ষণ বড়সাহেব বা ছোটসাহেবের অথবা দেওয়ানজির মরজি। চুনের গুদামের বাইরে একটা বড় মাদার গাছ ছিল। একবার রাসমণিপুরের জনৈক দুর্দান্ত প্রজা ঘুলঘুলি দিয়ে বার হয়ে মাদার গাছের নিচু ডাল ধরে ঝুলে পালিয়ে গিয়েছিল বলে তৎকালীন বড়সাহেব জন সাহেবের আদেশে গাছটা কেটে ফেলা হয়। চুনের গুদামে ইতিপূর্বে একজন প্রজা নাকি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল ভূত দেখে।
রাজারামের মনে ভূতের ভয়টা একটু বেশি। একলা কখনো তিনি এত রাত্রে চুনের গুদামে আসতেন না। আসবার আগে তাঁর গা-টা ছম্ ছম্ করছিল, এখন রামকানাইকে দেখে তিনি মনে একটু সাহস পেলেন। হোক না ঘুমন্ত, তবুও একটা জলজ্যান্ত মানুষ তো বটে। দেওয়ানজি ডাক দিলেন—ও কবরেজ মশাই—ও কবরেজ——
রামকানাই চমকে ধড়মড় করে উঠে বললেন—কে? ও দেওয়ান মশাই —আসুন আসুন—বলেই এমন ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাঁকে বসবার ঠাঁই দিতে, যেন রাজারাম তাঁর বাড়িতে আজ রাতের বেলা অতিথিরূপে পদার্পণ করেচেন।
রাজারাম বললেন—থাক থাক। বসবার জন্যি আসি নি, আমার সঙ্গে চলুন।
—কোথায় দেওয়ান মশাই?
—চলুন না।
—তা চলুন। তবে এমন ঘরে আর আমায় পোরবেন না দেওয়ান মশাই, বড্ড মশা। কামড়ে আমারে খেয়ে ফেলে দিয়েচে একেবারে।
—আপনার গেরোর ফের। নইলে আজ আপনি নীলকুঠির কবিরাজ, আপনাকে এখানে আসতি হবে কেন! যাক যা হবার হয়েচে, এখন চলুন আমার সঙ্গে।
—যেখানেই নিয়ে যান, একটু যেন ঘুমুতি পারি।
—মত বদলেচে?
—না দেওয়ান মশাই, হাত জোড় করে বলচি, আমারে ও অনুরোধ করবেন না। আমি কবিরাজ লোক, কারো অসুখ দেখলি নিজে গাছগাছড়া তুলে এনে