পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

চণ্ডীমণ্ডপে অমন ভিড় বারো মাসই লেগে আছে। কত রকমের দরবার করতে এসেছে নানা গ্রামের লোক, কারো জমিতে ফসল ভেঙে নীল বোনা হয়েচে জোর-জবরদস্তি করে, কারো নীলের দাদনের জন্যে যে জমিতে দাগ দেওয়ার কথা ছিল তার বদলে অন্য এবং উৎকৃষ্টতর জমিতে কুঠির আমীন গিয়ে নীল বোনার জন্যে চিহ্নিত করে এসেচে— এই সব নানা রকমের নালিশ।

 নালিশের প্রতিকার হোত। নতুবা দেওয়ানের চণ্ডীমণ্ডপে লোকের ভিড় জমতো না রোজ রোজ। তার জন্যে ঘুষ-ঘাষের ব্যবস্থা ছিল না। রাজারাম রায় কারো কাছে ঘুষ নেবার পাত্র ছিলেন না, তবে কার্য অন্তে কেউ একটা রুই মাছ, কি বড় একটু মানকচু কিংবা দু’ভাঁড় খেজুরের নলেন্‌ গুড় পাঠিয়ে দিলে ভেটস্বরূপ, তা তিনি ফেরত দেন বলে শোনা যায় নি।

 রাজারামের স্ত্রী জগদম্বা এক সময়ে বেশ সুন্দরী ছিলেন, পরনে, লালপেড়ে তাঁতের কোরা শাড়ি, হতে বাউটি পৈঁছে, লোহার খাড়ু ও শাঁখা, কপালে চওড়া করে সিঁদুর পরা, দোহারা চেহারার গিন্নিবান্নি মানুষটি।

 জগদম্বা এগিয়ে এসে বললেন— এখন বাইরে বেরিও না। সন্দে-আহ্নিক সেরে নাও আগে।

 রাজারাম হেসে স্ত্রীর হাতে ছোট একটা থলি দিয়ে বললেন— এটা রেখে দাও। কেন, কিছু জলপান আছে বুঝি?

 —আছেই তো। মুড়ি আর ছোলা ভেজেচি।

 —বাঃ বাঃ, দাঁড়াও আগে হাত পা ধুয়ে নিই। তিলু বিলু নিলু কোথায়?

 —তরকারি কুটচে।

 —আমি আসচি। তিলুকে জল দিতে বলো।

 সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর রাজারাম আহ্নিক করতে বসলেন রোয়াকের একপ্রান্তে। তিলু এসে আগেই সেখানে একখানা কুশাসন পেতে দিয়েছিল। অনেকক্ষণ ধরে সন্ধ্যা-আহ্নিক করলেন—ঘণ্টা খানেক প্রায়। অনেক কিছু স্তব-স্তোত্র পড়ালেন।

 এত দেরি হওয়ার কারণ এই, সন্ধ্যা-গায়ত্রী শেষ করে রাজারাম বিবিধ