পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কফি, রামকানাই ভুল করেচেন) নিয়ে এল—সত্যিক জাতের ছোঁয়াছুঁয়ি এখানে —নাঃ, এই সব ব্রাহ্মণেরও দেখচি এখানে জাত নেই। এখানে কবিরাজি করতে হোলে জল খাবেন না এখানকার, শুধু ডাব খেয়ে কাটাতে হবে।

 প্রসন্ন আমীন বললে—তাহোলে চলুন কবিরাজ মশাই—রাত হয়েচে।

 দেওয়ান রাজারাম পাকা লোক, তিনি এই সময় বললেন—তাহোলে কবিরাজ মশাইয়ের সাক্ষী দেওয়া ঠিক হোলো তো?

 প্রসন্ন আমীন রামকানাইয়ের দিকে চাইলে। রামকানাই বললে—সায়েব মশাই, তা আমি কেমন করে দেবো? সে আগেই বললাম তো দেওয়ান মশাইকে।

 ছোটসাহেব চোখ গরম করে বললে—সাক্ষী দেবে না?

 —না,সায়েব মশাই। মিথ্যে কথা বলতি আমি পারবো না। দোহাই আপনার। হাতজোড় করচি আপনার কাছে। আমার বাবা ছিলেন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত—

 —ও, তুমি এমনি সায়েস্তা হবে না। তোমার মাথার ঠিক এমনি হবে না। ভজা, নফরকে ডাক দ্যাও। দশ ঘা শ্যামচাঁদ কষে দিক।

 নফর মুচি লম্বা জোয়ান মিশকালো লোক। সে অনেক লোককে নিজের হাতে খুন করেচে। কুঠির বাইরে আশপাশ গ্রামে নফরকে সবাই ভয় করে। নফর বোধ হয় ঘুমুচ্ছিল। ভজার পেছনে পেছনে সে চোখ মুছতে মুছতে এল।

 ছোটসাহেব রামকানাইয়ের দিকে চেয়ে বললে—কেমন? লাগাবে শ্যামাচাঁদ?

 —আজ্ঞে সায়েব মশাই—তাহলি আমি মরে যাবো। আমারে মারতি বলবেন না। আষাঢ় মাসে বাত শ্লেষ্মা হয়ে আমার শরীর বড় দুর্বল—

 —মরে গেলে তাতে আমার কিছুই হবে না। নিয়ে যাও নফর—

 নফর বললে—যে আজ্ঞে হুজুর।

 নফর এসে রামকানাইয়ের হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চললো। যাবার সময় দেওয়ানজির দিকে তাকিয়ে বললে—তাহোলি আস্তাবলে নিয়ে যাই?

 এই সময় দেওয়ানের দিকে সে সামান্যক্ষণের জন্য স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইল।

১০৮