পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিজ্ঞ, পণ্ডিত ছেলে টোল খুলে কাব্য, দর্শন, ভক্তিশাস্ত্র পড়াচ্চে ছাত্রদের। সৎ ধার্মিক, ঈশ্বরকে চেনে। হবে না? তাঁর ছেলে কিনা? খুব হবে। দেশে দেশে ওকে চিনবে, জানবে।

 সেই মুহূর্তে তিলুকেও দেখলেন—দীনু বুড়ির আগে আগে চলে গিয়ে বাড়ির ছোট্ট দরজার মধ্যে ঢুকে চলে গেল। কি নতুন চোখেই ওকে দেখলেন যেন। মেয়েরাই সেই দেবী, যারা জন্মের দ্বারপথের অধিষ্ঠাত্রী— অনন্তের রাজ্য থেকে সসীমতার মধ্যেকার লীলাখেলার জগতে অহরহ আত্মাকে নিয়ে আসচে, তাদের নবজাত ক্ষুদ্র দেহটিকে কত যত্নে পরিপোষণ করচে, কত বিনিদ্র উদ্বিগ্ন রাত্রির ইতিহাস রচনা করে জীবনে জীবনে, কত নিঃস্বার্থ সেবার আকুল অশ্রুরাশিতে ভেজা সে ইতিহাসের অপঠিত অবজ্ঞাত পাতাগুলো।

 ভবানী বললেন—শোনো তিলু—

 —কি?

 —খোকাকে নেবে?

 —ও যাবে না বললাম যে!

 —একটু দাঁড়াও, দেখি। দাঁড়াও ওখানে।

 —আহা-হা! ঢং!

 মুচকে হেসে সে হেলেদুলে ছোট্ট দরজা দিয়ে বাড়ি ঢুকলো। কি শ্রী! মা হওয়ার মহিমা ওর সারা দেহে অমৃতের বসুধারা সিঞ্চন করেচে।

 ফণি চক্কত্তি বললেন—বোসো বাবাজি।

 সবাই মিলে বসলেন। ভবানী বাঁড়ুয্যে তামাক সেজে মামা চন্দ্র চাটুয্যের হাতে দিলেন। ফণি চক্কত্তি বললেন—বাবাজি, তোমাকে একটা কাজ করতি হবে—

 —কি মামা?

 —তোমাকে একবার আমার বাড়ি যেতি হবে। আমি একবার গয়া-কাশী যাবো ভাবচি। তোমার মামাও আমার সঙ্গে যাবেন। তুমি তো বাবা সব

১১২