বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রায় লুপ্ত হতে বসেচে এদেশে।

 দীনু ভট্‌চাজ বললেন—আরে এখন হয়েচে সব ফাঁকি। সায়েবসুবোয় বাংলা করেচে নীলকুঠিতে, তাই দেখি সবাই ভাবে অমনডা করবো। এখন যে খড়ের ঘরের রেওয়াজ উঠেই যাচ্চে। তেমন পাকা ঘরামিই বা আজকাল কই?

 রূপচাঁদ মুখুয্যে বললেন—সেদিন রাজারামের এক ভাইপো বলেচে সায়েবদের দেশে নাকি কলের গাড়ি উঠেচে। কলে চলে। কাগজে ছাপা করা ছবি নাকি সে দেখে এসেচে!

 দীনু বললেন—কলে চলে বাবাজি?

 —তাই তো শুনলাম। কালে কালে কতই দেখবো। আবার শুনেচ খুড়ো, মেটে তেল বলে একরকম তেল উঠেচে, পিদিমে জ্বলে। দেখে এসেচে সে কলকেতায়।

 —বাদ দ্যাও। বলে কলির কেতা, কলকেতা। আমাদের সর্ষে তেলই ভালো, রেড়ির তেলই ভালো, মেটে তেল, কাঠের তেলে আর দরকার নেই বাবাজি। হ্যাঁ, বলো ভবানী বাবাজি, একটু রাস্তাঘাটের খবর দ্যাও দিনি। বলো একটু। তুমি তো অনেক দেশ বেড়িয়েচ। পাহাড়গুলো কিরকম দেখতি বাবাজি?

 রূপচাঁদ মুখুয্যে দীনুর হাত থেকে হুঁকো নিতে নিতে বললেন—থাক, পাহাড়ের কথা এখন থাক। পাহাড় আবার কি রকম? মাটির ঢিবির মত, আবার কি? দেবনগরের গড়ের মাটির ঢিবি দ্যাখোনি? ওই রকম। হয়তো একটু বড়।

 ভবানী বললেন—দাদামশাই, পাহাড় দেখেচেন কোথায়?

 —দেখিনি তবে শুনেচি।

 —ঠিক।

 ভবানী এতগুলি বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তির সামনে তামাক খাবেন না, তাই হুঁকো নিয়ে আড়ালে চলে গেলেন। ফিরে এসে বললেন—কোথায় আপনারা যেতে

১১৫