পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —তুমি বল ফণি ভায়া। সবই তো আমি বললাম, এখন তুমি কিছু বলো।

 ফণি চক্কত্তি বললেন-এক সিকি করে দিও আর কি।

 নালু বললে—বড্ড বেশি হচ্চে কর্তা। মরে যাবো। বিশজন ব্রাহ্মণকে বিশ সিকি দিতি হলি

 —মরবে না। আমাদের আশীর্বাদে তোমার ভালোই হবে। একটি ছেলেও হয়েছে না?

 —আজ্ঞে সে আমার ছেলে নয়, আপনারই ছেলে।

 চন্দ্র চাটুয্যে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে হাসলেন। নালু পাল শেষে একটি দুয়ানি দক্ষিণেতে রাজী করিয়ে বাইরে চলে গেল। বোধ হয় তামাক খেতে।

 এইবার চন্দ্র চাটুয্যে বললেন—হ্যাঁ ভায়া, নালু কি বলে গেল?

 —কি?

 —তোমার স্বভাব-চরিত্তির এতদিন যাই থাক, আজকাল বুড়ো বয়সে ভালো হয়েছে বলে ভাবতাম। নালুর বৌয়ের সঙ্গে ভাবসাব কতদিনের?

 সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। রাগে ফণি চক্কত্তি জোরে জোরে তামাক টানতে টানতে বললেন—ওই তো চন্দদা, এখনো মনের সন্দ গেল না

 চন্দ্র চাটুয্যে কিছুক্ষণ পরে ভবানীকে বললেন —বাবা, নালু পালের ফলার কবে হবে তুমি দিন ঠিক করে দাও।

 ভবানী বাঁডুযো বললেন—নাল পালের ফলাবের কথায় মনে পড়লো মামা একটা কথা। ঝাঁসির কাছে ভরসুং লে একটা জায়গা আছে, সেখানে অম্বিকা দেবীর মন্দিরে কার্তিক মাসে মেলা হয় খুব বড়। সেখানে আছি, ভিক্ষে করে খাই। কাছে এক রাজার ছেলে থাকেন, সাধুসন্নিাসির বড় ভক্ত। আমাকে বললেন-কি করে খান? আমি বললাম, ভিক্ষে করি। তিনি সেদিন থেকে দুজনের উপযুক্ত ভাত, রুটি তরকারী, দই, পায়েস, লাড্ডু পাঠিয়ে দিতেন। যখন খুব ভাব হয়ে গেল তখন একদিন তিনি তার জীবনের কাহিনী বললেন আমার কাছে। জয়পুরের কাছে উরিয়ানা বলে রাজ্য আছে, তিনি তার বড় রাজকুমার। তাঁর বাপের আরও অনেক ছেলেপিলে। মিতাক্ষরা মতে বড়

১২১