পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রত্যেক দিন দুটি বেলা অম্বিকা-মন্দিরের ধর্মশালায় আমার জন্যে খাবার পাঠাতেন। কত জ্ঞানের কথা বলে, দুঃখু করতেন যে রাজার ছেলে না হয়ে গরীবের ঘরে জন্মালে শান্তি পেতেন। আমার সঙ্গে বেদান্ত আলোচনা করতেন। তাঁর স্ত্রীকেও আমি দেখেচি, অম্বিকা-মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন, রাজপুত মেয়ে, খুব লম্বা আর জোয়ান চেহারা, নাকে মস্ত বড় ফাঁদি নথ! একদিন দেখি কর্সি টেনে তামাক খাচ্চেন।

 রূপচাঁদ মুখুয্যে অবাক হয়ে বললে-মেয়েমানুষে?

 —ওদেশে খায়, রেওয়াজ আছে। বড় সুন্দর চেহারা, যেন জোরালো দুর্গাপ্রতিমা, অসুর মারলেই হয়। আমি ভাবতাম, না-জানি ওর সেই সৎশাশুড়ীটি কেমন, যিনি একেও জব্দ করে রেখেচেন। মাস দুই পরে আমি ওখান থেকে বিঠুর চলে এলাম, কানপুরের কাছে। ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈকে একদিন দেখেছিলাম অম্বিকা পূজো করতে। তারপর শুনেছিলাম ইংরেজদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে ঝাঁসির রাণী মারা পড়েচেন-পরমা সুন্দরী ছিলেন— তবে ও দেশের মেয়ে, জোয়ান চেহারা —

 —বল কি বাবাজি, এ যে সব অদ্ভুত কথা শোনালে। মেয়েমানুষে যুদ্ধ করলে কোম্পানীর সঙ্গে, ওসব কথা কখন শুনি নি - কোন্ দেশের কথা এ সব?

 —শুনবেন কি মামা, গাঁ ছেড়ে কখনো কোথাও বেরুলেন না তো। কিছু দেখলেনও না। এবার যদি যান-

 এই সময় নালু পাল আবার ব্যস্ত হয়ে এসে ঢুকল। সে বাড়ি চলে যাবে, হাটবার, তার অনেক কাজ বাকি। দিনটা ধার্য করে দিলে সে চলে যেতে পারে।

 ভবানী বাঁঁড়ু্য্যে বললেন—সামনের পূর্ণিমার রাত্রে দিন ধার্য রইল। কি বলেন মামা? সেদিন কারো অসুবিধে হবে?

 রূপচাঁদ মুখুয্যে বললেন—আমার বাতের ব্যামো। পুন্নিমতে আমি লক্ষ্মীর দিব্যি খাবো না, তাতে কোনো ক্ষতি নেই, ফল, দুধ, মঠ, এসব খাবো। ওই দিনই রইল ধার্য।

 ঈশ্বর বেষ্টম এতক্ষণ চুপ করে ভবানীর গল্প শুনছিল, কোনো কথা বলে নি।

১২৩