ছবিটা মনে এসেছিল—তা তিনি কি করে বলবেন? তবুও সে রাত্রে রূপচাঁদ মুখুয্যে একটা নতুন জীবন-রসের সন্ধান পেয়েছিলেন যেন। এতদিন পরে তার ক্ষুদ্র গ্রাম থেকে বহুদূরে, তার গত পঞ্চাশ বৎসরের জীবন থেকে বহুদূরে এসে জীবনটাকে যেন নতুন করে তিনি চিনতে পারলেন।
স্ত্রী নেই—আজ বিশ বৎসরের ওপর মারা গিয়েচে। সেও যেন স্বপ্ন, এতদুর থেকে সব যেন স্বপ্ন বলে মনে হয়। ইছামতীর ধারের তাঁর সেই ক্ষুদ্র গ্রামটিতে এখনি নিবারণ গয়লার বেগুনের ক্ষেতে হয়তো তাঁর ছাগলটা ঢুকে পড়েছে, ওরা তাড়াহুড়ো করচে লাঠি নিয়ে, তাঁর বড় ছেলে যতীন হয়তো আজ বাড়ি এসেছে, পূবের এড়ো ঘরে বোমা ও দুই মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছে—বেচারী খোকা! মাত্র পাঁচ টাকা মাইনেতে সাতক্ষীরের ন'বাবুদের তরফে কাজ করে, দু’তিন মাস অন্তর একবার বাড়ি আসতে পারে, ছেলেমেয়েগুলোর জন্যে মনটা কেমন করলেও চোখের দেখা দেখতে পায় না। গরীবের অদৃষ্টে এ রকমই হয়।
বড় ভালো ছেলে তার।
যখন কথাবার্তা সব ঠিকঠাক হোলো গয়াকাশী আসবার, তখন বড় খোকা এসে দাড়িয়ে বললে বাবা তোমার কাছে টাকাকড়ি আছে।
—আছে কিছু।
—কত?
—তা—ত্রিশটাকা হবে। ছোবায় পুঁতে রেখে দিয়েছিলাম সময়ে অসময়ের জন্যি। ওতেই হবে খুনু।
বাবা শোনো—ওতে হবে না—আমি তোমায়-
—হবে রে হবে। আর দিতি হবে না তোরে।
জোর করে পনেরোটি টাকা বড় খোকা দিয়েছিল উড়ুনির মূড়োতে বেঁধে। চোখে জল আসে সে কথা ভাবলে। কি সুন্দর তারাভরা আকাশ, কি চমৎকার চওড়া মুক্ত মাঠটা, একসারি ভূতের মত অন্ধকার গাছগুলো চোখে জল আসে থোকার সেই মুখ মনে হলে...
মন কেমন করে ওঠে গরীব ছেলেটার জন্যে, একখানা ফরায়াডাঙার ধুতি
১২৮