পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —করিটে হইবে।

 —কি ক'রে করা যাবে আমার বুদ্ধিতে কুলুচ্চে না। শেষ কাল কি জেল খেটি মরবো? টিপসই জাল করবো কি করে?

 —সব জাল হইল টো উহা জাল হইবে না কেন? মাথা খাটাইতে হইবে। পয়সা খরচ করিলে সব হইয়া যাইবে। মন দিয়া কাজ করে। টোমার ও প্রসন্ন আমীনের দু’টাকা করিয়া মাহিনা বাড়িল এ মাস হইটে।

 মাথা নিচু করে দুই হাত জুড়ে নমস্কার করে বললেন রাজারাম—আপনার খেয়েই তো মানুষ, সায়েব। বাখতিও আপনি মারতিও আপনি।

 কি একটা ইংরিজি কথা বলে বড়সাহেব চলে গেল ঘর থেকে বেরিয়ে।

 দুপুর বেলা।

 প্রসন্ন আমীন আজ অনেকখানি এগিয়ে এনেছে। গিরিশ মূহরী গদাধর মুহরীকে নিচু স্বরে বললে-খাওয়া-দাওয়ার কি ব্যবস্থা, ও গদাধর?

 গদাধর চোখের চশমার দড়ি খুলে ফেলে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে বললে

 রাজারাম ঠাকুরকে বলো না।

 —আমি পারবো না, আমার লজ্জা করে।

 —লজ্জার কি আছে? পেট জ্বলছে না?

 —তা তো জ্বলছে।

 তবে বলো। আমি পারবো না।

 এমন সময় নরহরি পেশকার বারান্দার বাহির থেকে সকলকে ডেকে বললে

 —দেওয়ানজি। আমীন বাবু। সব চান হয়েছে? ভাত তৈরী। আপনারা নেয়ে আসুন।

 দেওয়ান বাজারাম বললেন-আমার এখনো অনেক দেরি। তোমরা খেয়ে নেও গিয়ে।

 শেষ পর্যন্ত সকলেই একসাথে খেতে বসলেন—দেওয়ানজি ছাড়া। তিনি নীলকুঠিতে অন্নগ্রহণ করেন না। আহ্নিক না করেও খান না। এখানে সে

১৪৮