পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —কেন, আমি থাকলি কি হয়?

 —ভাবচি, এমন বেশ দিনটা

 —গয়া রাগের সুরে বললে-~ওসব আবোল-তাবোল এখন শোনবার আমার সময় নেই। চললাম।

 —একটু দাড়াও না গয়া? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে দাঁড়ালি?

 —না, আমি সঙের মত দাড়িয়ে থাকতি পারবো না এখানে। ঐ দেখুন, দেয়া কেমন ঘনিয়ে আসছে।

 ঘাট বাঁওড়ের বিলের ওপারে ঘন সবুজ আউশ ধানের আর নীলের চারার ক্ষেতের ওপরে ঘন, কালো শ্রাবণের মেঘ জমা হয়েছে। সাদা বকের দল উড়চে দূর চক্রবালের কোলে, মেঘপদবীর নিচে নিচে, হু হু ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝলক বয়ে এল শ্যামল প্রান্তরের দিক থেকে,সোঁ সোঁ শব্দ উঠলো দূরে, বিলের অপর প্রান্ত যেন ঝাপসা হয়ে এসেচে বৃষ্টির ধারায়। রথচক্রের নাভির মত দেখাচ্চে স্বচ্ছজল বিল বৃষ্টিমুখর তীরবেষ্টনীর মাঝখানে।

 প্রসন্ন চক্কক্তি ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো—গয়া ভিজবে যে, বৃষ্টি তে এল। চলো, আমার বাসায়।

 —না, আমি কুঠিতি চললাম-

 —ও গয়া, শোননা আমার কথা। ভিজবা।

 —ভিজি ভিজবো।

 —আচ্ছা গয়া আমি ভালোর জন্যি বলচি নে? কেউ নেই আমার বাসায়। চলো।

 —না, আমি যাবো না। আপনাকে না খুড়োমশায় বলে ডাকি?

 — ডাকো তাই কি হয়েছে। অন্যায় কথাডা কি বললাম তোমাকে? বিষ্টিতে ভিজবা, তাই বলছি আমার ঘরটা নিকটে আছে—সেখানে আশ্রয় নে। খারাপ কথা এডা?

 —না, বাজে কথা শোনবার সময় নেই। আপনি ছুট দিন, ওই দেখুন তাকিয়ে বিলির ওপারে-

১৫৩