পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রোগী দেখে বললে, ওষুধ দেবে। কিন্তু অনুপান যোগাড় করতি হবে, কলমীশাকের রস, সৈন্ধব লবণ দিয়ে সিদ্দ। ভাঁড়ে করে সে রস রেখে দিতে হবে সাতদিন। নালু পাল আর সেই নালু পাল নেই, অবস্থা ফিরিয়ে ফেলেচে ব্যবসা করে। আটচালা ঘর বেঁধেছে গত বৎসর। আটচালা ঘর তৈরী করা এ সব পাড়াগাঁয়ে বড়মানুষির লক্ষণ, আর চরম, বড়মানুষি অবিশ্যি দুর্গোৎসব করা! তাও গত বৎসর নালু পাল করেছে। অনেক লোকজনও খাইয়েছে। নাম বেরিয়ে গিয়েচে মানুষ বলে। ওর ঘরের মধ্যে নতুন কড়ি-বাঁধানো আলমারী, নক্সা-করা হাঁড়ির তাক রঙিন দড়ির শিকেতে ঝুলনো, খেরোমোড়া শীতলপাটি, কাঁসার পানের ডাবর, ঝকঝকে করে মাজা পিতলের দীপগাছা-সম্পন্ন গৃহস্থের বাড়ির সমস্ত উপকরণ আসবাব বর্তমান। রামকানাইয়ের প্রশংসমান দৃষ্টি রোগিণীর ঘরের সাজসজ্জার ওপর অনেকক্ষণ নিবদ্ধ আছে দেখে নালু পাল বললে— এইবার ঘূর্ণীর কুমোরদের তৈরী মাটির ফল কিছু আনবে ঠিক করিচি। ওই কড়ির আলনাটা দ্যাখছেন, আড়াই ট্যাকা দিয়ে কিনেচি বিনোদপুরের এক ব্রাহ্মণের মেয়ের কাছে। তাঁর নিজের হাতে গাঁথা।

 —বেশ, চমৎকার বাটি।

 —অসুখ সারবে তো, কবিরাজমশাই?

 —না মারলি মাধবনিদান শাস্তরডা মিথ্যে। তবে কি জানো, অনুপান আর সহপান ঠিকমত চাই। ওষুধ রোগ সারাবে না, সারবে ঠিকমত অনুপান আর সহপান। কলমীশাকের রস খেতি হবে-সেটি হোলে অনুপান। বোঝলে না?

 —আজ্ঞে হ্যাঁ।

 জলযোগ ব্যবস্থা হলো শসাকাটা, ফুলবাতাসা, নারকেল কোরা ও নারকোল নাডু। আচমনী জিনিম অর্থাৎ কোনো কিছু শস্যভাজা খাবেন না রামকানাই শুদ্রের গৃহে। এককাঠা চাল, মটরডালের বড়ি ও একটা আধুলি দর্শনী মিললো।

 পথে ভবানী বাঁড়ুয্যে বললেন-কবিরাজমশাই—নমক্কার হই।

 —ভালো আছেন জামাইবাবু?

 —আপনার আশীর্ব্বাদে। একটু আমার বাড়িতে আসতি হবে। ছেলেটার

১৫৫