বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 —বলবে না কেন? বিয়ের কথা তো?

 —আ মর, পোড়ার মুখ, লজ্জা করে না?

 —লজ্জা কি? ধিঙ্গি হয়ে থাকা খুব মানের কাজ ছিল বুঝি?

 —তিনজনকেই একরে মাথা মুড়তে হবে, তা শুনে তো?

 —সব জানি।

 —রাজী?

 —সত্যি কথা যদি বলতে হয়, তবে আমার কথা এই যে হয় তো হয়ে যাক্।

 —আমারও তাই মত। নিলুর মতটা কাল সকালে নিতে হবে।

 —সে আবার কি বলবে, ছেলেমানুষ, আমরা যা করবো সেও তাতে মত দেবেই।

 তিলু কত রাত পর্যন্ত ছাদে বসে ভাবলে। ত্রিশ বছর তার বয়েস হয়েছে। স্বামীর মুখ দেখা ছিল অস্বপনের স্বপন। এখনো বিশ্বাস হয় না; সত্যিই তার বিয়ে হবে? স্বামীর ঘরে সে যাবে? বোনদের সঙ্গে, তাই কি? ঘরে ঘরে তো এমনি হচ্চে। চন্দ্রকাকার বাপের সতেরোটা বিয়ে ছিল। কুলীন ঘরে অমন হয়েই থাকে। বিয়ের দিন করে ঠিক করেচে দাদা কে জানে। পঞ্চাশ তাই কি, সে নিজে কি আর খুকি আছে এখন?

 উৎসাহে পড়ে রাত্রে তিলুর ঘুম এল না চক্ষে। কি ভীষণ মশার গুঞ্জন বনে ঝোপে।

 তিলু যে সময় ছাদে একা বসে রাত জাগছিল, সে সময় নালু পাল মোলা- হাটির হাট থেকে ফিরে নিজের হাতে রান্না করে খেয়ে তবিল মিলিয়ে শুয়ে পড়েছে সবে।

 নাল এক ফন্দি এনেছে মাথায়।

 ব্যবসা কাজ সে খুব ভাল বোঝে এ ধারণা আজই হল। সাত টাকা ন' আনার পান-সুপুরি বিক্রি হয়েছে আজ। নিট লাভ এক টাকা তিন আনা। খরচের মধ্যে কেবল দু’ আনার আড়াই সের চাল, আর দু পয়সার গাঙের টাটকা