জ্বর আর কাসি হয়েচে দু'তিন দিন, একটু দেখে যান।
—হ্যাঁ হ্যাঁ, চলুন।
খোকা ওর মামীমার বুনুনি না-কাটা কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমুচ্ছিল। রামকানাই হাত দেখে বললেন—নবজ্বর। নাড়িতে রস রয়েচে। বড়ি দেবো, মধু আর শিউলিপাতার রস দিয়ে খাওয়াতি হবে।
ওর মা তিলু এবং ওর দুই ছোট মা উৎসুক ও শঙ্কিত মনে কাছেই দাঁড়িয়েছিল। ওরা এ গ্রামের বধূ নয়, কন্যা। সুতরাং গ্রাম্য প্রথানুযায়ী ওর যার তার সামনে বেরুতে পারে, যেখানে সেখানে যেতে পারে। কিন্তু যদি এ গ্রামের বধূ হতে, অন্য জায়গার মেয়ে-তাহলে অপরিচিত পরপুরুষ তো দূরের কথা, স্বামীর সঙ্গে পর্যন্ত যখন তখন দিনমানে সাক্ষাৎ করা বা বাকালাপ করা দাঁড়াতে বেহায়ার লক্ষণ।
তিলু কাঁদো-কাঁদো সুরে বললে-খোকার জ্বর কেমন দেখলেন, কবিরাজ মশাই।
—কিছু না মা, নবজ্বর। এই বর্ষাকালে চারিদিকি হচ্ছে। ভয় কি?
—সারবে তো?
—সারবে না তো আমরা রইচি কেন?
নিলু বললে আপনার পায়ে পড়ি কবিরাজমশাই। একটু ভালো করে দেখুন খোকারে।
—মা, আমি বলছি তিন দিন বড়ি খেলি খোকা সেরে ওঠবে। আপনারা ভয় পাবেন না।
—ওর গলার মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হয় কেন?
—কফ কুপিত হয়েচে, রসস্থ নাড়ী। ও রকম হয়ে থাকে। কিছু ভেবে। আমার সামনে এই বড়িটা মেড়ে খাইয়ে দাও মা। থল আছে?
—খল আনচি সিধু কাকাদের বাড়ি থেকে।
তিলু বললে -কবিরাজমশাই, বেলা হয়েছে, এখানে দুটি খেয়ে তবে যাবেন। দুপুরবেলা বাড়িতি লোক এলি না খাইয়ে যেতি দিতি আছে?
১৫৬