পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —তিতুমীর কেডা?

 —মুসলমানদের মোড়লপানা, যা বোঝলাম ওদের কথাবার্তার ভাবে। সেদিন বসে আছি হঠাৎ বড়সায়েবের কাছে চিঠি এল, তিতু মীর বলে একটা ফকির মহারাণীর সঙ্গে লড়াই বাধিয়েচে। নীলকুঠির লোকদের ওপর তার ভয়ানক রাগ। লুঠপাঠ করেচে, খুন-খারাবি হচ্চে।

 —চিঠি দিলে কে বড়সাহেবের কাছে?

  —ডঙ্কিনসন সায়েবের জায়গায় যে নতুন ম্যাজিস্টর এসেছেন, তিনি লিখেছেন তোমর লোকজন নিয়ে এসে—যেখানে যত নীলকুঠির সায়েব ছিল, গিয়ে দেখি যমুনার ধারে আমবাগানে তাঁবু সব সারি সারি। লোকজন, ঘোড়া, আসবাব, বন্দুক। ওদিকে সরকারী সৈন্য এসেছে, তাঁদের তাবু। সে এক এলাহি কাণ্ড, দাদা। আমার তো গিয়ে ভারি মজা লাগতি লাগলো। প্রসন্ন চত্তি আমীন গিয়েছিল, সে বড় দুঁদে। বললে, আমি দেখে আসি তিতু মীর কোথায় কি ভাবে আছে। আমাদের কারো ভয় হয় নি। যুদ্ধই তো হোলো না, একটা বাঁশের কেল্লা বাঁধিয়েচে যমুনার ধারে।

 —অনেক সায়েব জড়ো হয়েছিল?

 —বোয়ালমারি, পানচিতে, রঘুনাথগঞ্জ, পালপাড়া, দীঘড়ে-বিষ্ণুপুর সব কুঠির সায়েব লোকজন নিয়ে এসেচে। বন্দুক, গুলি, বারুদ। মুরগি, হাঁস, খাসি যোগাচ্চে গাঁয়ের লোকে। একটা মেয়েছেলেকে এমন মার মেরেচে তিতুমীরের লোক যে, তার নাকমুখ দিয়ে রক্ত ঝোঁঝালি দিয়ে পড়ছিল। তিতু মীরের কেল্লা ছিল এককোশ তিনপোয় পথ দুরি। আমরা ছিলাম একটা আমবাগানে।

 —যুদ্ধ কেমন হোলো?

 —তিতু মীর বলেছিল তার লোকজনদের সায়েবদের গোলাগুলিতি তার কিছুই হবে না। সরকারের সেপাইরা প্রথমবায় ফাঁকা আওয়াজ করে। তিতু মীর তার লোকজনদের বললে গোলাগুলি সে সব খেয়ে ফেলেছে। তখন আবার গুলি পুরে বন্দুক ছোঁড়া হলো। বাইশজন লোক কৌৎ। তখন বাকি সবাই টেনে দৌড় মারলে। তিতু মীরকে বেঁধে চালান দিলে কলকেতা। মিটে

১৬৩