পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কুসুম ঘাড় নেড়ে বললে- মুই তখন ছেলেমানুষ ছেলাম। মোর মনে নেই।

 —থাকবি আমাদের বাড়ি?

 —হাঁ।

 —বেশ থাক। চিঁড়ে মুড়কি খাবি? আয় চল রান্নাঘরের দিকি।

 রাজারাম বললেন-মেয়ের মত থাকবি। আর গোয়ালপস্কার-মস্কার করবি। তোর মা’র কাছে চাবি যা যখন খেতি ইচ্ছে হবে। নারকোল খাবি তো কত নারকোল আছে, কুরে নিয়ে খাস্। মুড়কি মাখা আছে ঘরে। খাবার জন্যি নাকি আবার কেউ বেরিয়ে যায়? আমার বাড়ির জিনিস খেয়ে গাঁয়ের লোক এলিয়ে যায় আর আমার গাঁয়ের মেয়ে বেরিয়ে যাবে পেট ভরে খেতি পায় না বলে? তোর এ পক্ষের বৌটাকেও বলবি শাম, কাজডা ভালো করেনি। বলি, ওর মা নেই যখন, তখন কেডা ওরে দেখবে বল্।

 শাম বিরক্তি দেখিয়ে বললে-বলবেন না সে সুমুন্দির ইস্ত্রীর কথা! মোর হাড় ভাজা-ভাজা করে ফেললে-মুই মাঠ থেকে ফিরলি মোরে বলেনা যে দুটো চালভাজা খা। রোজ পান্তাভাত, রোজ পান্তভাত। মুই বলি দুটো গরম ভাত মোরে দে, সেই সূর্যি ঘুরে যাবে তখন দুটো ঝিঙে ভাতে দিয়ে ভাত দেবে। মরেও না যে, না হয় আবার একটা বিয়ে করি।

 কুসুম মুখ টিপে হাসচে। বাবার কথায় তার খুব আমোদ হয়েছে বোধহয়।


 রামকানাই কবিরাজ খেজুরপাতার চট পেতে দিলেন ভবানী বাঁড়ুয্যেকে। বললেন- জামাইবাবু! আসুন, আসুন।

 —কি করছিলেন?

—ঈষের মূল সেদ্ধ করবো, তার যোগাড় করচি। এত বর্ষায় কোত্থেকে?

 সন্ধ্যা হবার দেরি নেই। অঝোরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে শ্রাবণের মাঝামাঝি। এ বাদলা তিন দিন থেকে সমানে চলচে। তিৎপল্লা গাছের ঝোপ বৃষ্টিতে ভিজে কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। মাটির পথ বেয়ে জলের স্রোত চলেছে ছোট ছোট নালার মত। বৃষ্টির শব্দে কান পাতা যায় না। বাগদিপাড়ার নলে বাগ্‌দি,

১৬৬