যস্মিন্ লোকা নিহিতা লোকিনশ্চ।
যিনি দীপ্তিমান, যিনি অণুর চেয়েও সূক্ষ্ম। যাঁর মধ্যে সমস্ত লোক রয়েচে, সেই সব লোকের অধিবাসীরা রয়েচে-
রামকানাই চিঁড়ে খেতে খেতে চিঁড়ের বাটিটা ঠেলে একপাশে সরিয়ে রেখেচেন তাঁর ডান হাতে তখনো একটা আধা-খাওয়া কঁচা লঙ্কা, মুখে বোকার মত দৃষ্টি, চোখ দিয়ে জল পড়চে। ছবির মত দেখাচ্চে সমস্তটা মিলে। ভবানী বাঁডুয্যে বিস্মিত হোলেন ওঁর জলে-ভরা টসটসে চোখের দিকে তাকিয়ে।
খালের ওপারে বাবলা গাছের মাথায় সপ্তমীর চাঁদ উঠেছে পরিষ্কার আকাশে। হুতুম-প্যাঁচা ডাকাচে নলবনের আড়ালে।
ভবানী অনেক রাত্রে বাড়ি রওনা হোলেন। শরতের আকাশে অগণিত নক্ষত্র, দূরে বনান্তরে কাঠঠোকরার তন্দ্রাস্তব্ধ রব, কচিৎ বা দু’একটা শিয়ালের ডাক-সবই যেন তাঁর কাছে অতি রহস্যময় বলে মনে হচ্ছিল। আজ নিভৃত, নিস্তব্ধ রসে তাঁর অন্তর অমৃতময় হয়েচে বলে তঁর বার বার মনে হতে লাগলো। রহস্যময় বটে, মধুরও বটে। মধুর ও রহস্যময় ও বিরাট ও সুন্দর ও বড় আপন সে দেবতা। একমাত্র দেবতা, আর কেউ নেই। যিনি অশব্দ, অম্পর্শ, অরূপ, অব্যয়, অরস ও অগন্ধ, অনাদি ও অনন্ত, তাঁর অপূর্ব আবির্ভাবে নৈশ আকাশ যেন থমথম করচে। এ সব পাড়াগাঁয়ে সেই দেবতার কথা কেউ বলে না। বধির বনতল ওদের পাশ-কাটিয়ে চলে যায়। নক্ষত্র ওঠে না, জ্যোৎস্নাও ফোটে না। সবাই আছে বিষয়সম্পত্তির তালে, দু’হাত এগিয়ে ভেরেণ্ডার কচা পুতে পরের জমি ফাঁকি দিয়ে নেবার তালে।
হে শান্ত, পরমব্যক্ত ও অব্যক্ত মহাদেবতা, সমস্ত আকাশ যেমন অন্ধকারে ওতপ্রোত, তেমনি আপনাতেও। তুমি দয়া করো, সবাইকে দয়া কোরো। খোকাকে দয়া কোরো, তাকে দরিদ্র করা ক্ষতি নেই, তোমাকে যেন সে জানে। ওর তিন মাকে দয়া কোরো।
তিলু স্বামীর জন্যে জেগে বসে ছিল। রাত অনেক হয়েচে, এত রাত্রে তো
১৭০