—নাও ভাই, বাড়ির কলা। বড় কাঁদি পড়েল আষাঢ় মাসে, বর্ষার জল পেয়ে ছড়া নষ্ট হয়ে গিয়েল।
তিলু বিলু খেতে এসেচে বনে, নিলু থোকাকে নিয়ে রেখেচে বাড়িতে। ওদের সবাই এসে জিনিস দিচ্ছে, খাতির করচে, মিষ্টি কথা বলচে। দুধ, চিনির মঠ, আখের গুড়ের মুড়কি, খই, কলা, নানা খাবার। ওরা যত বলে নেবো না, ততই দিয়ে যায় এ এসে, ও এসে। ওরাও যা এনেছিল, নীলমণি সমাদ্দারের পুত্রবধূর (ওদের অবস্থা গ্রামের মধ্যে বড় হীন) সঙ্গে সমানে ভাগ করেছে।
—ও দিদি, কি খাবি ভাই?
—দুটো চালভাজা এনেলাম তাই। আর একটা শসা আছে।
—দুধ নেই?
—দুধ ক’নে পাবো? গাই এখনো বিয়োয়নি।
—এখনো না? কবে বিয়োবে?
—আশ্বিন মাসের শেষাগোসা।
তিলুর ইঙ্গিতে বিলু ওদের দুজনকে চিঁড়ে, মুড়কি, বাতাসা, চিনির মঠ এনে দিলে। ষষ্ঠী চৌধুরীর স্ত্রী ওদের পাকাকলা দিয়ে গেলেন ছ'সাতটা।
ফণি চক্কত্তির পুত্রবধূ বললে—আমার অনেকখানি খেজুরের গুড় আছে, নিয়ে আসচি তাই।
তিল বললে—আমি নেবো না ভাই, এই ছোট কাকীমাকে দাও। অনেক মঠ আর বাতাস জমেছে। বিধুদিদি, এবার ছড়া কাটলে না যে? ছড়া কাটো শুনি।
বিধু ফণি চক্কক্তির বিধবা বোন, পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়েস-একসময়ে সুন্দরী বলে খ্যাতি ছিল এ গ্রামে। বিধু হাত নেড়ে বলতে আরম্ভ করলে:—
আজ বলেচে যেতে
পান সুপুরি খেতে
পানের ভেতর মৌরি-বাটা
ইস্কে বিস্কে ছবি আঁটা
১৭৪