বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চালনায় অব্যর্থভাবে লক্ষাবিদ্ধ করলো। বালককণ্ঠের মরণ-আর্তনাদে সকলে তেলের পিদীম হাতে ছুটে গেল। হাতেমুখে কাঁটালের ভুতুড়ি আর চাঁপা মাখা ছোট্ট ছেলে চিৎ হয়ে পড়ে আছে, বুক দিয়ে ভলকে ভলকে রক্ত উঠে মাটি ভাসিয়ে দিচ্ছে। চোখের দৃষ্টি স্থির, হাতের বাঁধন আল্‌গা। কেবল ছোট পা দুখানা তখনো কোনো কিছুকে বাধা দেওয়ার ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে আবার পিছিয়ে যাচ্ছে। সব শেষ হয়ে গেল তখুনি।

 রসিক মল্লিক সে রাত্রের কথা এখনো ভোলেনি। কিন্তু আসলে সে দস্যু, পিশাচ। টাকা পেলে সে সব করতে পারে। রামু সর্দারকে সে-ই সড়কির কোপে খুন করেছিল বাঁধালের দাঙ্গায়। নেবাজি মগুলের ভাই সাতু মণ্ডলকে চালকী গ্রামের খড়ের মাঠে এক লাঠির ঘায়ে শেষ করেছিল।

 এ হেন রসিক মল্লিক ও বড়সাহেবকে একত্র দেখে বাগদিপাড়ার লোক একটু পিছিয়ে গেল।

 রসিক হাঁক দিয়ে ডেকে বললে-কোথায় রে তাদের ছিহরি সর্দার! পাঠিয়ে দে সামনে। বড়সায়েবের হুকুম, তার মুণ্ডুটা সড়কির আগায় গিঁথে কুঠিতে নিয়ে যাই। মায়ের দুধ খেয়ে থাকিস তো সামনে এসে দাঁড়া ব্যাট। শেয়ালের বাচ্চা! এগিয়ে আয় বুনো শূওরের বাচ্চা! এগিয়ে আয় নেড়ি কুকুরের বাচ্চা! তোর বাবারে ডেকে নিয়ে আয় মোর সামনে, ও হারামজাদা!

 ছিহরি সর্দার লাঠি হাতে এগিয়ে আসছিল, তার বৌ গিয়ে তাকে কাপড় ধরে টেনে না রাখলে সে এগিয়ে আসতে ভয় পেতো না—তবে খুব সম্ভবত, প্রাণটা হারাতো। রসিক মল্লিকের সামনে সে দাঁড়াতে পারতো না। খুন জখম যার ব্যবসা, তার সামনে নিরীহ গৃহস্থ লাঠিয়াল কতক্ষণে দাঁড়াবে?

 ছোটসাহেব বললে-রসিক, ব্যাটা ছিহরি আর সাদেককে ধরে আনতি পারবা?

 বড়সাহেবের মেজাজ এতক্ষণে কিছুটা ঠাণ্ডা হয়ে থাকবে, সে বললে-I am afraid that would not be quite within the bounds of law. Let us return.

১৮২