পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নীলির জন্যি। মা কালীর দিব্যি নিয়ে মোরা বলিচি, নীল আর বোনব না!

 —কি পাইলে নীল বুনিটে ইচ্ছা আছে?

 —নীল আর বোনবো না, ধান করবো। যত ধানের জমিতি আপনাদের আমীন গিয়ে দাগ মেরে আসৰে, মোরা ধান বুনতি পারিনে। আপনারা নিজেদের জমিতে লাঙ্গল গরু কিনে নীলের চাষ করো—কেউ আপত্য করবে না। প্রজার জমি জোর করে বেদখল করে নীল করবা কেন সায়েব?

 —টোমারে পাঁচশো টাকা বকশিশ ডিবে। তুমি নীল বুনিটে বাধা দিও না। প্রজা হাট করিয়া ডাও।

 —মাপ করবেন সায়েব। মোর একার কথায় কিছু হবে না। মুই আপনারে বলচি শুনুন, তেরোখানা গাঁয়ের লোক একস্তার হয়ে জোট পেকিয়েচে। ভবানীপুর, নাটাবেড়ে, হুদো-মানিককোলির নীলকুঠির বেয়েতেরাও জোট পেকিয়েচে। হাওয়া এসেচে পূবদেশ থেকে আর দক্ষিণ থেকে।

 বড়সাহেব এ সমস্ত সংবাদ জানেন। সেদিনকার সেই অভিযানের পর তাই তিনি আজ ছিহরি সর্দারকে কুঠিতে ডেকেছিলেন অনেক কিছু আশ্বাস দিয়ে। ছিহরি এ রকম বেঁকে দাঁড়াবে তা বড়সাহেব ভাবেন নি।

 তবু বললেন-টুমি আমার কাছে চলিয়া আসিবে। চেষ্টা করিয়া ডেখো। অনেক টাকা পাইবে। কাছারিতে চাকুরি করিতে চাও?

 —না সায়েব। মোরা সাত পুরুষ কখনো চাকরি করি নি। আর আপনাদের এটা কথা বলি সায়েব-মুই একা এ ঝড় সামলাতি পারবো না। জেলা জুড়ে ঝড় উঠেছে, একা ছিহরি সর্দার কি করবে? আপনি বুঝে দ্যাখো সায়েব -একা মোরে দোষ দিও না। মুই কুঠির অনেক নুন খেইচি—তাই সব কথা খুলে বললাম।

 ডেভিড্ সাহেবকে ডেকে বড়সাহেব বললে I say, David, this man swims in shallow water, Let him go safely out and see that no harm is done to him. Not worth the trouble.

 সেদিন সন্ধ্যার পরে নীলকুঠিতে একটি গুপ্ত বৈঠক আহূত হোলো।

১৮৪