পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছবি আঁকবে—ওই দেখুন দুপুরে রোদে নদীর ধারে বিলিতি গাছতলায় কি সব টেঙিয়েছে। গিয়ে দেখুন রগড়! রায় মশায়, বড় সাহেবকে বলে মোরে একটা ট্যাকা দিতে বলুন। ধানের দর বেড়েচে, ট্যাকায় আট কাঠার বেশি ধান দেচ্ছে না। সংসার চলচে না।

 —আচ্ছা, দেখবো এখন। বড় সাহেবকে বল্লি হবে না। ডেভিড সাহেবকে বলতি হবে।

 রাজারাম রায় বিপন্ন মুখে নদীর ধারে গাছতলায় এসে দাঁড়ালেন। গাছটা হোল ইণ্ডিয়ান-কর্ক গাছ। শিপ্‌টন্‌ সাহেবের আগে যিনি বড় সাহেব ছিলেন, তিনি পাটনা জেলার নারাণগড় নীলকুঠিতে প্রথমে ম্যানেজার ছিলেন। শখ করে এই গাছটি সেখান থেকে এনে বাংলার মাটিতে রোপণ করেন। সে আজ পঁচিশ বছর আগেকার কথা। এখন গাছটি খুব বড় হয়েচে, ডালপালা বড় হয়ে নদীর জলে ঝুঁকে পড়েচে। এ অঞ্চলে এ জাতীয় বৃক্ষ অদৃষ্টপূর্ব, সুতরাং জনসাধারণ এর নাম দিয়েচে বিলিতি গাছ।

 রাজারাম তো বিলিতি গাছতলায় গিয়ে দাঁড়ালেন। নাঃ, মজা দ্যাখো একবার। এ সব কি কাণ্ড রে বাপু। ওটা আবার কি খাটিয়েচে? ব্যাপার কি? রাজারাম হেসে ফেলতেন, কিন্তু শিপ্‌টন্ সাহেবের মেম ওখানে উপস্থিত। মাগী কি করে এখানে, ভালো বিপদ!

 কোল্‌স্‌ওয়ার্দি গ্র্যাণ্ট এক টুকরো রঙিন পেন্সিল হাতে নিয়ে টাঙানো ক্যানভাসের এপাশে ওপাশে গিয়ে দুবার কি দেখলেন। মেমসাহেবকে বললেন —Will he be so good as to stand erect and stand still, say for ten minutes, madam?

 মেম বললেন—সোজা হইয়া ডাঁড়াও ডেওয়ান!

 —আচ্ছা হুজুর।

 রাজারাম কাঁচুমাচু মুখে খাড়া হয়ে পিঠটান করে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতেই গ্র্যাণ্ট সাহেব বললেন—No, no, your Dewan wears a theatrical mask, madam. Will he just stand at ease?

১৫