বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বললেন-রসিক, ব্যাটা তৈরি থাক। তবে খুনটা, বুঝলি নে-যখন গায়ের ওপর এসে পড়বে।

 ঝাউতলার অন্ধকার ও জ্যোৎস্নার জালবুনুনি পথে অনেক লোকের একটা দল এগিয়ে আসছে, ওদের হাতে মশাল—সড়কি ও লাঠিও দেখা যাচ্চে। রসিক হাঁকার দিয়ে বললে—এগিয়ে আয় ব্যাটারা—সামনে এগিয়ে আয়— তোদের ভুঁড়ি ফাঁসাই-

 কতকগুলো লোক এগিয়ে এসে বললে—কেডা? রসিকদাদা?

 —দাদা না, তোদের বাবা-

 —অমন কথা বলতি নেই—ছিঃ, এগিয়ে এসো দাদা-

 রসিককে হঠাৎ দেওয়ান রাজারাম আর পাশে দেখতে পেলেন না, ইতিমধ্যে সে কখন অদৃশ্য হয়ে কোথায় মিলিয়ে গেল আধ-জ্যোৎস্না আধ-অন্ধকারে। অল্পক্ষণ পরে দেখলেন সামনের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক ছুটচে-আর ওদের মাঝখানে চর্কির মত কি একটা ঘুরে ঘুরে পাক খাচ্চে, কিসের একটা ফলকে দু’চারবার চকচকে জ্যোৎস্না খেলে গেল! কি ব্যাপার? রসিক মল্লিক নাকি? ইস্! করে কি?

 খুব একটা হল্লা উঠলো কুঠির হাতার বাইরে। তারপরেই সব নিস্তব্ধ। দুরে শব্দ মিলিয়ে গেল। কেউ কোথাও নেই। সাহেবদের ঘোড়ার শব্দ একবার যেন রাজারাম শুনলেন বালাখানার উত্তরের পথে। এগিয়ে গেলেন রাজারাম। ঝাউতলার পথে, এখানে ওখানে লোেক কি ঘাপ্‌টি মেরে আছে নাকি? না। ওগুলো কি?

 মানুষ মরে পড়ে আছে। এক, দুই, তিন চার, পাঁচ! রসিক ব্যাটা এ করেচে কি! সব সড়কির কোপ। শেষ হয়ে গিয়েচে সব কটা।

 —ও রসিক? রসিক?

 রাজারামের মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। হাঙ্গামা বাধিয়ে গিয়েছে রসিক মল্লিক। এই সব লাস এখনই গুম করে ফেলতে হবে। সায়েবদের একবার জানানো দরকার।

১৯০