বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —কত দাম দেবো?

 —তিন আনা দেবেন।

 —বড্ড বেশি হয়ে গেল!

 যদু জেলে কাঁধ থেকে বোঠেখানা নামিয়ে বললে—বাবু, বাজার কি পড়েছে ভেবে দেখুন দিকি। ছেলেবেলায় আউশ চালের পালি ছেল দু'পয়সা। তার থেকে উঠলো এক আনা। এখন ছ’পয়সা। মোর সংসারে ছ’টি প্রাণী খেতি। এককাঠা চালির কম এক বেলা হয় না। দু’ বেলা তিন আনা চালেরই দাম যদি দিই, তবে নুন তেল, তরকারি, কাপড়, কবিরাজ, এসোজন, বোসোজন কোত্থেকে করি? সংসার আর চালাবার জো নেই জামাইঠাকুর, আমাদের মত গরীব লোকের আর চলবে না-

 ভবানী বাঁড়ুয্যে দ্বিরুক্তি না করে মাছটা হাতে নিয়ে ফিরলেন বাড়ির দিকে। বিলু ও নিলু আগে ছুটে এল। বিলু স্বামীর হাত থেকে মাছটা ছিনিয়ে নিয়ে বললে—কি মাছ? ভেটকি না চিতল? বাঃ-

 নিলু বললে—চমৎকার মাছটা। ও খোকা, মাছ খাবি? আয় আমার কোলে-

 খোকা বাবার কোলেই এঁটে রইল। বললে-বাবা-বাবা-

 সে বাবাকে বড্ড ভালোবাসে। বাবার কোলে সব সময় উঠতে পারে না বলে বাবার কোলের প্রতি তার একটি রহস্যময় আকর্ষণ বিদ্যমান। বিলু চোখ পাকিয়ে বললে—আসবি নে?

 —না।

 —থাক, তোর বাবা যেন তোরে খেতি দ্যায় ভাত রেঁধে।

 —বাবা।

 —মাছ খাবি নে তো?

 —খাই।

 —খাই তো আয়-

 খোকা আবেদনের সুরে কাঁদো কাঁদো মুখে বাবার দিকে তাকিয়ে বললে— ওই দ্যাখো-

১৯২