থেমে গিয়েচে। রাজারামের পরে জগদম্বা সহমরণে যাবার জন্য জিদ ধরেছিলেন, তিলু, বিলু ও নিলু অনেক বুঝিয়ে তাঁকে নিবৃত্ত করে। কিন্তু তিনি বেশিদিন বাঁচেন নি। ভেবে ভেবে কেমন মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর এ অবস্থায় খুব সেবা করেছিল তিন ননদে মিলে। গত ৺দুর্গোৎসবের পর তিন দিনের মাত্র জ্বর ভোগ করে জগদম্বা কদমতলার শ্মশানে স্বামীর চিতার পাশে স্থান গ্রহণ করেচেন। নিঃসন্তান রাজারামের সমূদয় সম্পত্তির এখন তিলুর খোকাই উত্তরাধিকারী। গ্রামের সবাই এদের অনুরোধ করেছিল রাজারামের পৈতৃক ভিটেতে উঠে গিয়ে বাস করতে, কেন ভবানী বাঁড়ুয্যে রাজী হননি তিনিই জানেন।
অতএব রাজারাম প্রদত্ত সেই একটুকরো জমিতে, সেই খড়ের ঘরেই ভবানী এখনো বাস করচেন। অবশেষে একদিন তিলু স্বামীকে কথাটা বললে।
ভবানী বললেন—তিলু, তুমিও কেন এ অনুরোধ কর।
—কেন বলুন বুঝিয়ে? কেন বাস করবেন না আপনার নিজের শ্বশুরের ভিটেতে?
—না। আমার ছেলে ঐ সম্পত্তি নেবে না।
—সম্পত্তিও নেবে না?
—না,তিলু রাগ কোরো না, বহু লোকের ওপর অত্যাচারের ফলেঐ সম্পত্তি গড়ে উঠেছে—আমি চাইনে আমর ছেলে ওই সম্পত্তির অন্ন খাক। শোনো তিল, আমি অনেক ভালো লোকের সঙ্গ করেছিলাম। এইটুকু জেনেচি, বিলাসিতা যেখানে, বাড়তি যেখানে, সেখানেই পাপ,সেখানেই আবর্জনা, আত্মা সেখানে মলিন। চৈতন্যদেব কি আর সাধে রঘুনাথ দাসকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “ভালো নাহি খাবে আর ভালো নাহি পরিবে!”
—আপনি যা ভালো বোঝেন।
-আমি তোমাকে অনেকদিন বলেচি তো, আমি অন্য পথের পথিক। তোমার দাদার—কিছু মনে করো না—কাজকর্ম আমার পছন্দ ছিল না কোনোদিন। রামু বাগ্দিকে খুন করিয়েছিলেন উনিই। রামকানাই কবিরাজের ওপর অত্যাচার উনিই করেন। সেই রামকানাই কিন্তু তাঁকে বিপদের ইঙ্গিত