পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেয়। ভবিতব্য, কানে যাবে কেন? যাক গে ওসব কথা। আমার খোকা যদি বাঁচে, সে অন্যভাবে জীবনযাপন করবে। নির্লোভ হবে। সরল, ধার্মিক, সত্যপরায়ণ হবে। যদি সে ভগবানকে জানতে চায়, তবে সরলতা ও দীনতার মধ্যে ওকে জীবনযাপন করতে হবে। মলিন, বিষয়াসক্ত মনে ভগবদ্দর্শন হয় না। আমি ওকে সেইভাবে মানুষ করবো।

 —ও কি আপনার মত সন্নিসি হয়ে যাবে?

 —তুমি জানো, আমি সন্ন্যাস গ্রহণ করি নি। আমার শুরুদেব মহারাজ (ভবানী যুক্তকরে প্রণাম করলেন) বলেছিলেন—বাচ্চা, তেরা আবি ভোগ হ্যায়। সন্ন্যাস দেন নি। তিনি আমার ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন ছবির মত। তবে তিনি আমাকে আশীর্বাদ করেছিলেন, সংসারে থেকেও আমি যেন ভগবানকে ভুলে না যাই। অসত্য পথে, লোভের পথে, পাপের পথে পা না দিই। শ্রীমদ্ভাগবতে যাকে বলেছে ‘ বিত্তপাঠ্য নো’, অর্থাৎ বিষয়ের জন্যে জালজুয়োচুরি, তা কোনো দিন না করি! আমার ছেলেকে আমি সেই পথে পা দিতে এগিয়ে ঠেলে দেবো? তোমার দাদার সম্পত্তি ভোগ করলে তাই হবে।

 —তবে কি হবে দাদার সম্পত্তি?

 —কেন তুমি?

 —আমার ছেলে নেবে না, আমি নেবো? আমাকে কি যে ভেবেচেন আপনি?

 —তবে তোমার দুই বোন?

 —তাদেরই বা কেন ঠেলে দেবেন বিষয়ের পথে?

 —যদি তারা চায়?

 —চাইলে আপনি স্বামী, পরমগুরু তাদের। তারা নির্বুদ্ধি মেয়েমানুষ, আপনি তাদের বোঝাবেন না কেন?

 —তা হয় না তিলু। তাদের ইচ্ছে যদি থাকে, তারা বড় হয়ে গিয়েচে, ভোগের ইচ্ছে যদি থাকে তবে ভোগ করুক। জোর করে নিবৃত্ত করা যায় না।

 —জোর করবেন কেন, বোঝাবেন। আমিই আগে তাদের মন বুঝি,

২০৫