ফুল ফোটা বন-ঝোপে অজানা বন-পক্ষীর কাকলী—এসব দেখবার চোখ নেই ওই হাঁদামুখো ডেভিডটার কি গোঁয়ার-গোবিন্দ শিপ্টনের। ওরা এসেচে গ্রাম্য ইংলণ্ডের চাষাভুষো পরিবার থেকে। ওয়েস্টার্ন মিডল্যাণ্ডের ব্লাই ও ফেয়ারিং- ফোর্ড গ্রাম থেকে। এখানে নীলকুঠির বড় ম্যানেজার না হোলে শুরা পানটকস্ ম্যানরের জমিদারের অধীনে লাঙল চষতো নিজের নিজের ফার্ম হাউসে। দরিদ্র কালা আদমীদের ওপর এখানে রাজা সেজে বসে আছে। হায় ভগবান! তিনি এসেছেন দেশ দেখতে শুধু নয়, একখানা বই লিখবেন বাংলা দেশের এই জীবন নিয়ে। এখানকার লোকজনের, এই চমৎকার নদীর, এই অজানা বনদৃশ্যের ছবি আঁকবেন সেই বইতে। ইতিমধ্যে সে বইয়ের পরিকল্পনা তাঁর মাথায় এসে গিয়েচে। নাম দেবেন, “Anglo-Indian life in Rural Bengal”। অনেক মাল-মশলা যোগাড়ও করে ফেলেচেন।
ঠিক সেই সময় নালু পাল মোল্লাহাটির হাট থেকে মাথায় মোট নিয়ে ফিরচে। আগের হাটের দিন সে যা লাভ করেছিল, আজ লাভ তার দ্বিগুণ। বেশ চেঁচিয়ে সে গান ধরেছে—
‘হৃদয়-বাসমন্দিরে দাঁড়া মা ত্রিভঙ্গ হয়ে—’
এমন সময় পড়ে গেল গ্র্যাণ্ট সাহেবের সামনে। গ্র্যাণ্ট সাহেব ডেভিডকে বললেন—লোকটাকে ভাল করে দেখি। একটু থামাও। বাঃ বাঃ, ও কি করে?
ডেভিড সাহেব একেবারে বাঙালি হয়ে গিয়েচে কথাবার্তার ধরনে। ঠিক এ দেশের গ্রাম্য লোকের মত বাংলা বলে। অনেকদিন এক জায়গাতে আছে। সে মেমসাহেবের দিকে চেয়ে হেসে বলল—He can have his old yew cut down, can't he, madam?
পরে নালু পালের দিকে চেয়ে বললে—বলি ও কর্তা, দাঁড়াও তো দেখি—
নালু পাল আজ একেবারে বাঘের সামনে পড়ে গিয়েচে। তবে ভাগ্যি ভালো, এ হলো ছোট সায়েব, লোকটি বড় সাহেবের মত নয়, মারধোর করে না। মেমটা কে? বোধ হয় বড় সায়েবের।
নালু পাল দাঁড়িয়ে পড়ে বললে-আজ্ঞে, সেলাম। কি বলচেন?
ইছামতী—২