হলা পেকে সাহস পেয়ে রান্নাঘরের দাওয়ায় উঠে গিয়ে বসলো তিলুর পিছু পিছু।
এই দুর্দান্ত দস্যুকে তিলু আর তার ছেলে কি ক’রে বশ করেছে কে জানে। পোষা কুকুরের মত সে দিব্যি তিলুর পেছনে পেছনে ঘুরতে লাগলো সসঙ্কোচ আনন্দে।
বেশ নিকানো-গুছানো মাটির দাওয়া। উচ্ছেলতার ফুল ফুটে ঝুলছে খড়ের চাল থেকে। পেছনে শ্যাম চক্কত্তিদের বাঁশঝাড়ে নিবিড় ছায়া। শালিখ ও ছাতারে পাখী ডাকচে। একটা বসন্তবৌরি উড়ে এসে বাঁশগাছের কঞ্চির ওপরে দোল খাচ্ছে। শুকনো বাঁশপাতায় বালির সুগন্ধ বেরুচ্ছে। বনবিছুটির লতা উঠেছে রান্নাঘরের জানালা বেয়ে। তিলু হলা পেকের সামনে রাখলে এক খুঁচি চালভাজা, কাঁচা লঙ্কা ও একমালা ঝুনো নারকোল। এক থাবা খেজুরের গুড় রাখলে একটা পাথরবাঠিতে।
হলা পেকের নিশ্চয় খুব ক্ষিদে পেয়েছিল। সে এক খুঁচি চালভাজা নিমেষে নিঃশেষ করে বললে—থাকে তো আর দুটো দ্যান, দিদিঠাকরুণ—
—বোসো দাদা। দিচ্ছি। একটা গল্প করে ডাকাতির, করবে দাদা?
হলা পেকে আবার একধামি চালভাজা নিয়ে খেতে খেতে গল্প শুরু করলে, ভাণ্ডারখোলা গ্রামের নীলমণি মুখুয্যের বাড়ী অঘোর মুচি আর সে রণ-পা পরে ডাকাতি করতে গিয়েছিল। তাদের বাড়ী গিয়ে দেখলে বাড়ীতে তাদের চার-পাঁচজন পুরুষমানুষ, মেয়েমানুষও আট-দশটা। দুজন বাইরের চাকর, ওদের একজন আবার স্ত্রীপুত্র নিয়ে গোয়ালঘরের পাশের ঘরে বাস করে। ওদের মধ্যে পরামর্শ হলো বাড়ীতে চড়াও হবে কিনা। শেষ পরে ‘লুঠ’করাই ধার্য হোলো। ঢেঁকি দিয়ে বাইরের দরজা ভেঙে ওর ঘরে ঢুকে দ্যাখে পুরুষেরা লাঠি নিয়ে, সড়কি নিয়ে তৈরি। মেয়েরা প্রাণপণে আর্তনাদ শুরু করেছে।
তিলু বললে—আহা!
—আহা নয়। শোনো আগে দিদিমণি। প্রাণ সে রাত্রে যাবার দাখিল হয়েছিল। মোরা জানিনে, সে বাড়ীর দাক্ষায়ণী বলে একটা বিধবা মেয়ে