পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আড়তে ‘সার জন লরেন্স’ ডুবি ছাড়া আর অন্য কথা নেই।

 বাংলার অনেক জেলার বহু তীর্থযাত্রী এবার এই জাহাজ ডুবে মারা গিয়েছিল। বাংলার সামাজিক ইতিহাসে সার জন লরেন্স জাহাজ-ডুবির একটি বিশিষ্ট স্থান আছে এ-জন্যে।


 গয়ামেম সবে বড় সাহেবের কুঠি থেকে বেরিয়ে কিছুদূর এসেছে, এমন সময় প্রসঙ্গ আমীন তাকে ডেকে বললে—ও গয়া, শোনো—ও গয়া—

 গয়া পেছন দিকে চেয়ে মুখ ঘুরিয়ে বললে—আমার এখন ন্যাকরা করবার সময় নেই।

 —শোননা একটা কথা বলি—

 —কি?

 —ওবেলা বাড়ী থাকবা?

 —থাকি না থাকি আপনার তাতে কি?

 —না, তাই এমনি বলচি।

 —এখানে কোনো কথা না। যদি কোনো কথা বলতি হয়, সন্দের পর আমাদের বাড়ি যাবেন, মার সামনে কথা কবে—

 প্রসঙ্গ চক্কত্তি এগিয়ে এসে একগাল হেসে বলে—না না, আমি এখানে কি কথা বলতি যাচ্চি—বলচি যে তুমি কেমন আছ, একটু রোগা দেখাচ্চে কিনা তাই।

 —থাক, পথেঘাটে আর ঢঙ করতি হবে না—

 না, এই গয়াকে প্রসন্ন চক্কত্তি ঠিকমত বুঝে উঠতেই পারলে না। যখন মনে হয় ওর ওপর একটু বুঝি প্রসন্ন হোলো-হোলো, অমনি হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। প্রসন্ন হতবুদ্ধি হয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।

 পেছনদিকে ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে প্রসন্ন চেয়ে দেখল বড় সাহেব শিপ্‌টন্‌ কোথায় বেরিয়ে যাচ্চে। বড় ভয় হোলো তার। বড় সাহেব দেখে ফেললে নাকি, তার ও গয়ামেমের কথাবার্তা? নাঃ—

২১২