পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সন্দে হবার এত দেরিও থাকে আজকাল। বাঁওড়ের ধারে বড় চটকা গাছে রোদ রাঙা হয়ে উঠলো, চড়ার ক্ষেতে ক্ষেতে ঝিঙের ফুল ফুটলো, শাম্‌কুট্‌ পাখীর ঝাঁক ইছামতীর ওপার থেকে উড়ে আকাইরের বিলের দিকে চলে গেল, তবুও সন্দে আর হয় না। কতক্ষণ পরে বাগ্‌দিপাড়ায়, কলুপাড়ায় বাড়ি বাড়ি সন্দের শাক বেজে উঠলো, বটতলার খেপী সন্নিসীনীর মন্দিরে কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজ শোনা গেল।

 প্রসন্ন চক্কত্তি গিয়ে ডাকলে একটু ভয়ে ভয়ে—ও বরদা দিদি—

 প্রথমেই গয়ার নাম ধরে ডাকতে সাহস হয় না কিনা!

 মেঘ না চাইতেই জল। প্রসন্ন চক্কত্তিকে মহাখুশি করে গয়ামেম ঘরের বাইরে এসে বললে—কি খুড়োমশাই?

 —বরদাদিদি বাড়ি নেই?

 —না, কেন?

 —তাই বলচি।

 গয়ামেম মুখ টিপে হেসে বললে—মার কাছে আপনার দরকার? তাহ’লি মাকে ডেকে আনি? যুগীদের বাড়ি গিয়েচে—

 —না, না। বোসো গয়া, তোমার সঙ্গে দুটো কথা বলি—

 —কি?

 —আচ্ছা আমাকে তোমার কেমনডা লাগে?

 —বুড়োমানুষ, কেমন আবার লাগবে?

 —খুব বুড়ো কি আমি। অন্যাই কথাডা বলো না গয়া। বড় সায়েবের বয়স হই নি বুঝি?

 —ওদের কথা ছাড়ান দ্যান। আপনি কি বলচেন তাই বলুন—

 —আমি তোমারে না দেখি থাকতি পারিনে কেন বলো তো?

 —মরণের ভগ্নদশা। এ কথা বলতি লজ্জা হয় না আমারে?

 —লজ্জা হয় বলেই তো এতদিন বলতি পারি নি—

 —খুব করেলেন। এখন বুঝি মুখি আর কিছু আটকায় না—

২১৩