পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —না সত্যি গয়া, এত মেয়ে দ্যাখলাম কিন্তু তোমার মত এমন চুল, এমন ছিরি আর কোনোডা চকি পড়লো না—

 —ওসব কথা থাক। একটা পরামর্শ দিই শুনুন—

 —কি?

 —কাউকে বলবেন না বলুন?

 প্রসন্ন চক্কত্তির মুখ উজ্জ্বল দেখালো। এত ঘনিষ্ঠ ভাবে প্রসন্ন চক্কত্তির সঙ্গে কোনদিন গয়া কথা বলে নি। কি বাঁকা ভঙ্গিমা ওর কালো ভুরু জোড়ার। কি মুখের হাসির আলো। স্বর্গ আজ পৃথিবীতে এসে ধরা দিল কি এই শরৎ দিনের অপরাহ্নে?

 কি বলবে গয়া? কি বলবে ও?

 বুক ঢিপ ঢিপ করে প্রসন্ন আমীনের। সে আগ্রহের অধীরতায় ব্যগ্রকণ্ঠে বললে—বলো না গয়া, জিনিসটা কি? আমি আবার কার কাছে বলতে যাচ্চি তোমার আমার দুজনের মধ্যেকার কথা?

 শেষদিকের কথাগুলো খুব জোর দিয়ে উচ্চারণ করলে প্রসন্ন চক্কত্তি। গয়া কিন্তু কথার ইঙ্গিতটুকু সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সহজ সুরেই বললে—শুনুন বলি। আপনার ভালোর জন্যি বলচি। সায়েবদের ভেতর ভাঙন ধরেচে। ওরা চলে যাচ্চে এখান থেকে। বড় সায়েবের মেম এখান থেকে শীগগির চলে যাবে। মেয় লোকটা ভালো। যাবার সময় ওর কাছে কিছু চেয়ে নেন গিয়ে। দেবে। লোক ভালো। কথাডা শোনবেন।

 প্রসন্ন চক্কত্তি বুদ্ধিমান ব্যক্তি। সে আগে থেকে কিছু-কিছু এ সম্বন্ধে যে অনুমান না করেছিল এমন নয়। সায়েবরা চলে যাবে…সায়েবরা চলে যাবে…জানে সে কিছু কিছু। কিন্তু গয়া এভাবের কথা তাকে আজ এতদিন পরে বললে কেন? তার সুখ-দুঃখে, উন্নতি-অবনতিতে গয়ামেমের কি? প্রসন্ন চক্কত্তির সারা শরীরে পুলকের শিহরণ বয়ে গেল, সন্দেবেলার পাঁচমিশেলি আলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে আজ এতকাল পরে জীবনের শেষ প্রহরের দিকে যেন কি একটা নতুন জিনিসের সন্ধান পেলে প্রসন্ন।

২১৪