পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সে বললে—সায়েবরা চলে যাচ্চে কেন?

 গয়া হেসে বললে—ওদের ঘুণি ডাঙায় উঠে গিয়েচে যে খুড়োমশাই! জানেন না?

 —শুনিচি কিছু কিছু।

 —সমস্ত জেলার লোক ক্ষেপে গিয়েচে। রোজ চিঠি আসচে মাজিস্টর সায়েবের কাছ থেকে। সাবধান হতি বলচে। হাজার হোক সাদা চামড়া তো। মেমেদের আগে সরিয়ে দেচ্চে। আপনারেও বলি, একটু সাবধান হয়ে চলবেন। খাতক প্রজার ওপর আগের মত আর করবেন না। করলি আর চলবে না—

 —কেন, আমি মলি তোমার কি গয়া?

 প্রসন্ন চক্কত্তির গলার সুর হঠাৎ গাঢ় হয়ে উঠলো।

 গয়া খিল খিল করে হেসে উঠে বললে—নাঃ, আপনারে নিয়ে আর যদি পারা যায়! বলতি গ্যালাম একটা ভালো কথা, আর অমনি আপনি আরম্ভ করে দেলেন যা তা—

 —কি খারাপ কথাডা আমি বললাম গয়া?

 কণ্ঠস্বর পূর্ববৎ গাঢ়, বরং গাঢ়তর।

 —আবার যতো সব বাজে কথা! বলি যে কথা বললাম, কানে গেল না? দাঁড়ান—দাঁড়ান—

 বলেই প্রসন্ন চক্কত্তিকে অবাক ও স্তম্ভিত করে গয়া তার খুব কাছে এসে তার পিঠে একটা চড় মেরে বললে—একটা মশা—এই দেখন—

 সমস্ত দেহ শিউরে উঠলো প্রসন্ন আমীনের। পৃথিবী ঘুরছে কি বন্‌ বন্‌ করে? গয়া বল্লে—যা বললাম, সেইরকম চলবেন—বুঝলেন? কথা কানে গেল?

 —গিয়েচে। আচ্ছা গয়া, না যদি চলি তোমার কি? তোমার ক্ষেতিডা কি?

 গয়া রাগের সুরে বললে—আমার কলা! কি আবার আমার? না শোনেন মরবেন দেওয়ানজির মত।

 —রাগ করচো কেন গয়া? আমার মরণই ভালো। কে-ই বা কাঁদবে

২১৫