পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —দাঁড়াও ওখানে।

 গ্র্যাণ্ট সাহেব বললেন—ও কি একটু দাঁড়াবে এখানে? আমি একটু ওকে দেখে নিই।

 ডেভিড সাহেব বললে—দাঁড়াও এখানে। তোমাকে দেখে সাহেব ছবি আঁকবে।

 গ্র্যাণ্ট সাহেব বললে—ও কি করে? বেশ লোকটি! খাসা চেহারা। চলো যাই।

 —ও আমাদের হাটে জিনিস বিক্রি করতে এসেছিল। You won't want him any more?

 —No, I want to thank him David, or shall I—

 গ্র্যাণ্ট সাহেব পকেটে হাত দিতে যেতেই ডেভিড তাড়াতাড়ি নিজের পকেট থেকে একটা আধুলি বার করে নালু পালের সামনে ছুঁড়ে দিয়ে বললে—নাও, সাহেব তোমাকে বক্‌শিশ করলেন—

 নালু পাল অবাক হয়ে আধুলিটা ধুলো থেকে কুড়িয়ে নিয়ে বল্লে—সেলাম, সায়েব! আমি যেতে পারি?

 —যাও।

 সুন্দর বিকেল সেদিন নেমেছিল পাঁচপোতার বাঁওড়ের ধারে। বন্যপুষ্পসুরভিত হয়েছিল ঈষত্তপ্ত বাতাস। রাঙা মেঘের পাহাড় ফুটে উঠেছিল অস্ত আকাশপটে দূরবিস্তৃত আউশ ধানের সবুজ ক্ষেতের ও-প্রান্তে। কিচমিচ করছিল গাঙশালিক ও দোয়েল পাখীর ঝাঁক। কোল্‌স্‌ওয়ার্দি গ্র্যাণ্ট কতক্ষণ একদৃষ্টে অস্তদিগন্থের পানে চেয়ে রইলেন। তাঁর মনে একটি শান্ত গভীর রসের অনুভূতি জেগে উঠলো। বহুদূর নিয়ে যায় সে অনুভূতি মানুষকে। আকাশের বিরাটত্বের সচেতন স্পর্শ আছে সে অনুভূতির মধ্যে। দূরাগত বংশধ্বনির সুস্বরের মত করুণ তার আবেদন।

 গ্র্যাণ্ট সাহেব ভাবলেন, এই তো ভারতবর্ষ। এতদিন ঘুরে মরেচেন বোম্বাই, পুনা ক্যাণ্টন্‌মেণ্টের পোলো খেলার মাঠে আর অ্যাংলো ইণ্ডিয়ানদের ক্লাবে। এরা এক অদ্ভুত জীব। এদেশে এসেই এমন অদ্ভুত জীব হয়ে পড়ে যে

১৮